• ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ শহীদ মিনারে নেওয়া হবে বদরুদ্দীনের মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ
আজ শহীদ মিনারে নেওয়া হবে বদরুদ্দীনের মরদেহ
সংবাদটি শেয়ার করুন....

প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। শেষবারের মতো তাকে শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময়ের জন্য মরদেহ রাখা হবে।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ বাসভবনে নেওয়া হয়েছে।

তার বড় মেয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি ফেরার পর সোমবার বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাকে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হবে। গতকাল রবিবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি একজন লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছিলেন বদরুদ্দীন উমর। দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন ও সমাজ বিশ্লেষণে তিনি সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গীয় প্রেসিডেন্সির বর্ধমান জেলার কাশিয়ারা গ্রামে এক বাঙালি মুসলিম জমিদার পরিবারে তার জন্ম। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন, তবে তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ছোট মেয়ে সারা আকতার তার দেখাশোনা করতেন। লন্ডনপ্রবাসী বড় মেয়ে আজ দেশে ফিরবেন।

বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুদ্দীন উমরের বাবা আবুল হাশিম ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। তিনি অখণ্ড বাংলার পক্ষে কাজ করেছেন এবং মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ১৯৫০ সালে পরিবার নিয়ে ঢাকায় আসেন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন আবুল হাশিম। এ আন্দোলন নিয়ে বদরুদ্দীন উমর গভীর গবেষণা করে মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন।

তার গবেষণার মধ্যে রয়েছে— পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি (তিন খণ্ডে), সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি, বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ শেষে তিনি শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজে দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করে পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে শিক্ষকতা চালিয়ে গেলেও ১৯৬৮ সালে তিনি রাজনীতি শুরু করেন।

তিনি বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।

মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের অগ্রনায়ক, সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শোকবার্তায় বলা হয়, বদরুদ্দীন উমর মুক্তচিন্তা ও প্রগতির উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকা, গবেষণা, উপনিবেশবাদবিরোধী অবস্থান ও সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি নিষ্ঠা ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের প্রয়োজনীয়তা সবসময় তুলে ধরেছেন এবং জুলাই আন্দোলনকে উপমহাদেশের এক বিরল গণ-অভ্যুত্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।