• ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুুর আগে হাসিনার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়ে গেছেন বদরুদ্দীন উমর

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ
মৃত্যুুর আগে হাসিনার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়ে গেছেন বদরুদ্দীন উমর
সংবাদটি শেয়ার করুন....

বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, গবেষক ও লেখক বদরুদ্দীন উমর মৃত্যুর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ৬ পৃষ্ঠার জবানবন্দি দেন এবং তার ভিডিও জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়। এতদিন প্রসিকিউশন তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

প্রসিকিউশন জানিয়েছে, বদরুদ্দীন উমরের জবানবন্দি ট্রাইব্যুনালে গ্রহণের জন্য আবেদন করা হবে কি না, তা চিফ প্রসিকিউটর সিদ্ধান্ত নেবেন। একইদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে প্রসিকিউশন টিম তার জবানবন্দির পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য প্রকাশ করে।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মামলায় বদরুদ্দীন উমর ছিলেন দ্বিতীয় সাক্ষী। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি এই বামপন্থি রাজনীতিক তার জবানবন্দিতে শেখ হাসিনার শাসনকাল, ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল, দমননীতি, নির্বাচন কারচুপি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভারতের সঙ্গে আঁতাত এবং আওয়ামী লীগের পতন নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দেন।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আমি বদরুদ্দীন উমর, পিতা মরহুম আবুল হাশিম। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে একটি অনন্য ঘটনা। ভারত কিংবা পাকিস্তানে এ ধরনের শক্তিশালী ও ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান দেখা যায়নি। বাংলাদেশ বরাবরই গণঅভ্যুত্থানের দেশ—১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৯০ সালের ঘটনাগুলো তার প্রমাণ। তবে এসবের মধ্যে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান সবচেয়ে বিস্ফোরক ও রূপান্তরমূলক ছিল।

ভাষা আন্দোলনে ভাষার স্বীকৃতি এসেছিল, ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের পতন ঘটে এবং ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোনও আন্দোলনেই এমন সর্বগ্রাসী ভাঙন ও দলীয় পলায়ন ঘটেনি। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। শুধু তিনিই নন, তার মন্ত্রিসভা ও দলীয় নেতারাও দেশ ছাড়েন। এভাবে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একটি সংগঠিত দলীয় পতন ঘটে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার পালানোর পরদিন থেকেই দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে শেখ মুজিবের মূর্তি ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলে। এটি ছিল ইতিহাসের প্রতিশোধের প্রতীক। জনগণের দীর্ঘদিনের ক্রোধ ও বঞ্চনার বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ শুধু ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়নি, জনগণের বিশ্বাস থেকেও সরে গেছে। মুসলিম লীগের মতোই তাদের জন্য এটি ছিল চূড়ান্ত রাজনৈতিক পতন। ভারতের সহায়তায় তারা কিছু তৎপরতা চালাতে পারে, কিন্তু জাতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তাদের পুনরুত্থান অসম্ভব।

ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবারের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্ররা প্রধান চালিকা শক্তি ছিল। তাদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা, সাহস ও আত্মত্যাগ ছিল ইতিহাসে বিরল।

আওয়ামী লীগের শাসনকাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তার সময়ে বড় বড় অপরাধ করেছেন এবং ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। র-এর সঙ্গে তার সম্পর্কই তাকে ক্ষমতায় রাখে। পতনের পর তিনি ভারতে পালিয়েছেন এবং সেখানেই থাকবেন। উমরের মতে, এটি এক ধরনের শাস্তি। তিনি আরও বলেন, ভারত সরকারও তাকে শেষমেশ সরিয়ে দিতে পারে এবং সেটিকে বাংলাদেশি কারও কাজ বলে প্রচার করতে পারে।