
ঈমানের পাশাপাশি মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো উত্তম চরিত্র। এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষের আচরণ ও অন্যদের সঙ্গে ব্যবহারিক সৌন্দর্য প্রকাশ করে। উত্তম চরিত্র মানে হলো, অন্যের সঙ্গে এমন আচরণ করা যা আপনি নিজের জন্য কামনা করেন, যা শরিয়তসম্মত, ন্যায়সংগত ও সদ্ভাবপূর্ণ। এতে রয়েছে মুখে হাসি রাখা, কোমল ব্যবহার করা, মন্দের জবাবে ভালো ব্যবহার করা ইত্যাদি।
রাসুল (সা.) বলেছেন, তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো, মন্দ কাজের পরপরই ভালো কাজ করো, তাতে মন্দ দূর হবে এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৭)
শায়খ ইবনু সাদি (রহ.) উল্লেখ করেছেন, উত্তম চরিত্র একটি মহান ও সম্মানিত গুণ। এর ভিত্তি হলো ধৈর্য, সহনশীলতা ও নৈতিকতার প্রতি আগ্রহ। এর ফলে অন্যদের প্রতি ক্ষমাশীলতা, কষ্টদাতাকে ক্ষমা করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সৃষ্টির কল্যাণে নিয়োজিত থাকা সম্ভব হয়।
এসব গুণ মানুষের চারিত্রিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথ সুগম করে। মহান আল্লাহও এসব গুণ অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করো, সত্য-সঠিক কাজের আদেশ দাও এবং জাহিলদের এড়িয়ে চলো। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯৯)
রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম, সে আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামত দিবসেও আমার কাছে অত্যন্ত নিকটবর্তী থাকবে।” (তিরমিজি, হাদিস : ২০১৮)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু দারদা (রা.) বলেন, “আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, সচ্চরিত্র ও সদাচারই মিজানের মধ্যে সবচেয়ে ভারী হবে। সচ্চরিত্রবান ও সদাচারী ব্যক্তি তার চারিত্রিক সৌন্দর্য ও সদাচারের মাধ্যমে রোজাদার ও নামাজীর পর্যায়ে পৌঁছায়।” (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৩)
দুনিয়াতেও এই গুণ শত্রুর মধ্যে বন্ধুত্ব জন্ম দেয়। মহান আল্লাহ এই চরিত্রকে সৌভাগ্যের চাবি বলেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “মন্দকে প্রতিহত করো, ফলে যা উত্কৃষ্টতর, এবং তোমার ও যার সঙ্গে শত্রুতা রয়েছে সে হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। এটি শুধুমাত্র ধৈর্যশীলদের হয় এবং মহাভাগ্যবানরা এর অধিকারী।” (সুরা : ফুসসিলাত, আয়াত : ৩৪-৩৫)
জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম কারণ: আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহারকারী, মিথ্যা বলে না এমন ব্যক্তি এবং যার চরিত্র সৌন্দর্যমণ্ডিত, তাদের জন্য জান্নাতে আলাদা ঘর বরাদ্দ থাকবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)
অধিকারী শ্রেষ্ঠ মানুষ: রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।” (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)
আল্লাহ ও রাসুলের ভালোবাসা লাভের মাধ্যম: আল্লাহ বলেন, “সুকর্ম করো, নিশ্চয় আল্লাহ সুকর্মশীলদের ভালোবাসেন।” (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫)
রাসুল (সা.) বলেছেন, “কিয়ামতের দিনে আমার প্রিয়তম এবং নিকটতমরা চরিত্রে শ্রেষ্ঠতমদের মধ্যে হবে।” (রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস : ১৭৪৭)
পরিপূর্ণ ঈমানের নিদর্শন: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, “ঈমান সম্পূর্ণ মুসলমান হল সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি।” (তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)
ওজনে সবচেয়ে ভারী আমল: রাসুল (সা.) বলেছেন, “মিজানের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে ভারী আর কিছু নেই।” (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৯)
আমল ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ: আয়েশা (রা.) বলেন, “মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে সাওম পালনকারী ও তাহাজ্জুদগুজারির সমান মর্যাদা অর্জন করতে পারে।” (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)
ঘরে বরকত ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি: আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, যাকে কোমলতা দেওয়া হয়, তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, আত্মীয়তা, উত্তম চরিত্র ও প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার প্রাপ্ত হয়, যা আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি ও সন্তানদের মধ্যে বরকত আনে। (আহমদ)
অতএব, ইহকাল ও পরকালের সফলতার জন্য আমাদের উচিত চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনে যত্নবান হওয়া।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এম.জি.আর.নাছির মজুমদার, সম্পাদক : এস এম রফিকুল ইসলাম, যোগাযোগ ঠিকানা: সেঞ্চুরি সেন্টার: খ-২২৫, প্রগতি সরণি, মেরুল,বাড্ডা, ঢাকা-১২১২।, ফোন নং : +৮৮-০২-৫৫০৫৫০৪৭ | মোবাইল নং: ০১৭১৬৩৭১২৮৬
www: dailybhor.com
© ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোর