
দীর্ঘ সময় পর সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও ব্যাপক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির (৯ম গ্রেড) ১৮ জন প্রকৌশলীকে নিয়োগ দিয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
এর মধ্যে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ৬ জন, সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল) ৫ জন, সহকারী প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল) ৫ জন, সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার (হার্ডওয়্যার) ১ জন এবং সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার (নেটওয়ার্ক) ১ জন রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর চারটি জাতীয় দৈনিকে ১২টি পদের বিপরীতে ৬৮ জনকে নিয়োগের লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর স্বাধীন তত্ত্বাবধানে ২০২৫ সালের ৪ জুলাই আবেদনকারী ২৫ হাজার প্রার্থীর মধ্যে দুই শিফটে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল) পদে ১৬টি পদের বিপরীতে ৬০৪২ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন, যার মধ্যে ৯৪ জন মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন। সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার (হার্ডওয়্যার) পদে লিখিত পরীক্ষায় ২৩১ জন অংশ নেন, এবং মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন ৬ জন। এছাড়া সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার (নেটওয়ার্ক) পদে ৩১৮ জন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মধ্যে ৫ জন মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন।
মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৭০ নম্বর লিখিত, ২০ নম্বর মৌখিক ও ১০ নম্বর একাডেমিক ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। একাডেমিক ফলাফলের জন্য এসএসসি পরীক্ষায় ৩.০, এইচএসসি পরীক্ষায় ৩.০ এবং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৪.০ নম্বর বরাদ্দ করা হয়। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়নের দায়িত্ব পালন করে বুয়েট। বুয়েটের নেওয়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪২ জন সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল), ২৬ জন সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল), ২৬ জন সহকারী প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল), ৬ জন সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার (হার্ডওয়্যার) ও ৫ জন সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার (নেটওয়ার্ক)-এর ফলাফলের হার্ডকপি কঠোর গোপনীয়তায় সিলগালা অবস্থায় ঢাকা ওয়াসায় পাঠানো হয়।
এরপর ঢাকা ওয়াসা গত ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ৪২ জনের, ৩০ সেপ্টেম্বর সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল) ২৬ জনের, ৫ অক্টোবর সহকারী প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল) ২৬ জনের, সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার (হার্ডওয়্যার) ৬ জনের এবং সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার (নেটওয়ার্ক) ৫ জনের মৌখিক পরীক্ষা নেয়। মৌখিক পরীক্ষায় বুয়েটের দুইজন ও এমআইএসটির একজন অধ্যাপক অংশ নেন।
এছাড়া ঢাকা ওয়াসার উচ্চতর সিলেকশন বোর্ডের সদস্যসহ মোট ৯ জন ব্যক্তিত্ব সাক্ষাৎকার বোর্ডে উপস্থিত থেকে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সকলের উপস্থিতিতে বুয়েট কর্তৃক পাঠানো সিলগালা লিখিত ফলাফল খোলা হয় এবং মৌখিক পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে যোগ করে মেধাক্রম অনুসারে ১৮ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরবচ্ছিন্ন ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে এই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। অনেক প্রার্থী বলেছেন— “এমন স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা আমরা আগে কখনো দেখিনি।” কেউ কেউ নির্বাচিত না হয়েও সন্তুষ্ট মনে ফিরে গেছেন। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, দীর্ঘ বছর পর ঢাকা ওয়াসা এমন স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন— “দেশ গঠনে প্রয়োজন সৎ, দক্ষ ও মেধাবী প্রকৌশলী। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। ঢাকা ওয়াসার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি”।