- রাজউজ ও প্রশাসন নিরবনগরবাসীর নতুন বিনোদন ওয়াটার জর্বিং
- বেপরোয়া গতিতে প্রকাশ্যে চলছে চাঁদাবাজি
- দোকানপাট দখল- বেদখলে সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয়
- প্রায় ঘটে অনৈতিক কার্যকলাপ ও চুরি- ছিনতাই
- খাবারের দাম চড়া; ওয়াটার জর্বিং, নৌকা ভ্রমণসহ রাইডের চড়ার অতিরিক্ত মূল্য
তুরাগের দিয়াবাড়িতে অবৈধ নতুন ফুডকার্ট বাজারসহ একাধিক বিনোদন কেন্দ্রকে ঘিরে শক্তিশালী সংঘবদ্ধ একটি চাঁদাবাজ এবং অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছে । সরকারি জমিতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের নিত্যনতুন দোকানপাট। অনেকটাই পাল্লা দিয়ে দিব্যি চলছে সরকারি পরিত্যক্ত জমি দখল- বেদখল। স্হানীয় ও বহিরাগত সংঘবদ্ধ একাধিক চক্র এ পেশায় জড়িত রয়েছে। এ অঞ্চলে চাঁদাবাজীর ঘটনা অহরহ ঘটছে। এছাড়া বেপরোয়া গতিতে প্রকাশ্যে চলছে চাঁদাবাজী ও দলবাজী। প্রায় ঘটছে অনৈতিক কার্যকলাপ ও চুরি- ছিনতাই।
সব কিছু দেখেও না দেখার বান করছে স্হানীয় প্রশাসন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউজ)।
এছাড়া ডিয়াবাড়ী মেট্রোরেল এলাকায় নগরবাসীর নতুন বিনোদনের জন্য বিদেশ থেকে আনা হয়েছে “ওয়াটার জর্বিং”। এখানে রয়েছে বিনোদনের সকল ব্যবস্হা। কিন্তু নিত্যনতুন খাবারের দোকান গুলোতে চড়া দাম। শিশু – কিশোর, যুবক-যুবতী ও তরুণ- তরুণীদের ওয়াটার জর্বিং, নৌকা ভ্রমণ, নাগর দোলনাসহ অন্যান্য রাইডের চড়ার অতিরিক্ত মূল্য নিচেছ ব্যবসায়ীরা। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশ্বস্থ তথ্য সূত্রের।
অভিযোগ রয়েছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউজ) এর জমিতে অনুমতি ছাড়াই মেট্রোরেল উত্তরা সেন্টার ও উত্তর স্টেশনের পাশে গড়ে উঠেছে এই ‘নতুন ফুডকার্ট বাজার’। বর্তমান সরকার কিংবা দলের নাম এবং রাজনৈতিক পদ পদবি’র পরিচয় ভাঙিয়ে কতিথ নেতারা প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের টাকা কৌশলে চাঁদাবাজী করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চ এ সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের একাধিক অভিযোগ থাকলেও প্রশাসন ও রাজউক কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

আজ বুধবার বিকেলে সরেজমিনে ডিয়াবাড়ী ও মেট্রোরেল বিশাল এলাকা ঘুরে এবং বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ডিয়াবাড়ী পুরাতন ‘বউবাজার’ গরুর বাজার উচ্ছেদের পর এখানে পূনরায় নতুন বাজার গড়ে তুলেন চাঁদাবাজ চক্রের সক্রিয় সদস্য প্রথম অক্ষর রা+ দু+ ও জ+ ই+অ+স+ গংরা । শুরুর দিকে ৮ থেকে ১০টি দোকানপাট দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে দোকানের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক । এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি দোকান থেকে প্রতিদিন দোকান ভাড়া বাবদ ২০০ টাকা টাকা। লাইট চার্জ দৈনিক ৩০ টাকা, একটি দোকানে তিনটি করে লাইট “অর্থাৎ গড়ে প্রতি দোকান থেকে ৯০ টাকা, পানি ব্যবহারে জন্য দৈনিক দিতে হয় ৫০ টাকা। এতে দৈনিক এক ব্যবসায়ীকে ৩৪০ টাকা চাঁদা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব দোকান থেকে দৈনিক প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। মাস শেষে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রতিটি দোকান থেকে এককালীন ২৫ হাজার টাকা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেয়া হয়। এখাত থেকে মোট প্রায় সাড়ে ১০ লাখ থেকে ১১ লাখ টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয় চক্রটি। বাজারে বিনোদনের জন্য নৌকা, বাচ্চাদের জন্য স্লিপার ও একটা ড্রাগন ট্রেন থেকে মাসে চাঁদা ১ থেকে ২ লক্ষ টাকার বেশী তোলা হয়। দোকান ভাড়া ভিত্তিক প্রায় ৩০ লাখ এবং অগ্রিম বাবদ ১১ লাখ এবং বিনোদন বাবদ ৮ লাখ টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ৪৮ থেকে ৫০ লাখ টাকা এসব খাত থেকে চাঁদা তোলা হয়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের দাবি- বিএনপি, যুবদল, ছাত্র দল ও শ্রমিক দলের নাম ভাঙিয়ে এ চক্র চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দলের ভাবমূর্তি অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিএনপি ইতোমধ্যে হাইব্রিড ও অসাধু নেতাদের বহিষ্কার করলেও এই বাজার-ভিত্তিক চাঁদাবাজি থেমে নেই। বাজারটি মূলত সন্ধ্যার পর জমে ওঠে। বিশাল এ নীরব এলাকাটিতে উঠতি বয়সী কিছু উশৃংখল তরুণ-তরুণী অনৈতিক বিশাল এলাকায় অনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ নানাবিধ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ব্যাঙ্গের ছাতার মতো আশপাশের নার্সারির আড়ালে এসব অনৈতিক কাজ চলে প্রশাসনের নাকের ডগায়।
স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন, এতবড় চাঁদাবাজি, অবৈধ বাজার গঠন ও অনৈতিক কার্যকলাপ চললেও রাজউক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেনই বা চুপচাপ ? রাজউকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নীরবতা ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন্দ্র করে গুঞ্জন উঠেছে; কোন বৃহৎ স্বার্থে কিংবা কোন অর্থে তারা এ নীরবতা পালন করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে চাঁদাবাজির এ সংস্কৃতি বিএনপির জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করতে পারে। দলের জনপ্রিয়তা, শৃঙ্খলা ও আদর্শ রক্ষায় এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ‘স্বৈরাচারের দোসররা’ দলের ভেতরেই বিভাজন ও দুর্নীতির বিষবাষ্প ছড়াবে। দিয়াবাড়ী ও মেট্রোরেল এলাকায় এ অবৈধ বাজার ও চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। বিকেল থেকে শুরু করে রাত ১১/১২ টা পর্যন্ত চলে খাবারের দোকানের বেচাকেনা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, রাজউক, সিটি কর্পোরেশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত; খুব দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
উত্তরা বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছে, আমরা প্রতিনিয়তই উত্তরা ও তুরাগের ডিয়াবাড়ী – মেট্রোরেল এলাকা গুলোতে টহল অব্যাহত আছে। মাঝেমধ্যে চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ও সন্দেহজনক মানুষদের তল্লাশি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, বানিজ্য উপদেষ্টা, পুলিশ প্রধান (আইজিপি), ডিএমপি কমিশনার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি), ভুক্তা অধিকার সংরক্ষণের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট মহলের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তুরাগ এলাকার বাসিন্দা ও সর্বস্তরের জনগণ।