পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া বন্দর লঞ্চঘাট গ্রামের দরিদ্র পরিবারের নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে হোগলা বুনে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন। তারা এখন গ্রামের নারীদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। তাদের তৈরি হোগলা ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে। কম পুঁজি লাগায় গ্রামীণ নারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই শিল্পটি।
একসময় প্রতিটি পরিবারের বিছানার নিচে ব্যবহার এবং ধানের গোলা তৈরির জন্য হোগলার কদর ছিল। তবে আধুনিক কালে ধানের গোলায় হোগলার ব্যবহার অনেকাংশে বিলীন হয়ে যায়। ৯০-এর দশকের পর বরফ উৎপাদন, সরবরাহ এবং মাছ রপ্তানির কারণে এই উপজেলায় হোগলার ব্যবহার আবার বাড়তে শুরু করে। হোগলাকে কেন্দ্র করে কালাইয়া বন্দরের লঞ্চঘাট এলাকায় হোগলা শিল্পের পল্লি গড়ে ওঠে। বাউফলের বাণিজ্যিক কেন্দ্র কালাইয়া বন্দরের লঞ্চঘাট এলাকায় প্রায় ৩০০ পরিবার বসবাস করে, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির। বাড়ির ভিটা ছাড়া তাদের আর কিছু নেই, ব্যবসার মতো পুঁজিও নেই। বেশিরভাগ পুরুষ সদস্য অন্যের জমিতে চাষ বা দিনমজুর হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
জানা গেছে, ৯০-এর দশকে কালাইয়া বন্দর লঞ্চঘাট এলাকায় কয়েকটি বরফকল স্থাপিত হয়। এসব বরফকলকে কেন্দ্র করে মাছের আড়ত বসে এবং সেই সুযোগে মৃতপ্রায় হোগলা শিল্পের পুনর্জাগরণ ঘটে। বরফকলের বরফ সরবরাহ এবং মাছ মোকামজাত করতে হোগলার চাহিদা তৈরি হয়। বর্তমানে বাউফলের হোগলা শিল্পীরা হাজার হাজার হোগলা তৈরি করে বরফকল ও মাছের আড়তে সরবরাহ করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কালাইয়া লঞ্চঘাটের অঞ্জনা রানী পুত্রবধূ মনিকাকে নিয়ে হোগলা তৈরি করছেন। অঞ্জনা জানান, ১৩-১৪ বছর বয়সে এ গ্রামের হরিপদ মণ্ডলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। অভাব-অনটনের সংসার সামাল দিতে একসময় হোগলা তৈরিতে হাত দেন তিনি। তাদের তৈরি হোগলার আলাদা সুনাম রয়েছে, কারণ তারা বাছাইকৃত পাতা ব্যবহার করে হোগলা তৈরি করেন। অধিকাংশ হোগলাই স্থানীয় বরফকল ও মাছের আড়তদারদের কাছে বিক্রি হয়।
হোগলা শিল্পীরা জানান, দুজন মিলে একটি হোগলা তৈরি করতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। বরফকল ও মাছের আড়তের জন্য আড়াই হাত পাশ এবং তিন হাত লম্বা হোগলা, আর পারিবারিক ব্যবহারের জন্য চার হাত পাশ এবং সাড়ে পাঁচ হাত লম্বা হোগলা তৈরি হয়। বরফকল ও মাছের আড়তে সরবরাহকৃত প্রতিটি হোগলার দাম ৬০ টাকা। হোগলা তৈরির মূল উপকরণ হোগলাপাতা শুকিয়ে আঁটি বেঁধে বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে কালাইয়া বন্দরে আনা হয়। প্রতি আঁটি পাতার দাম ১৫০ টাকা, আর এক আঁটি থেকে ১০টি হোগলা তৈরি হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “গ্রামীণ এ শিল্পে নারীদের সম্পৃক্ততা সত্যিই প্রশংসনীয়। গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে এ শিল্প বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এসব নারীকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।”