
সরকারি এলপিজির দাম আবার বাড়তে পারে। সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউসুফ হোসেন ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত আবেদনটি গত সপ্তাহে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা দেওয়া হয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে এলপি গ্যাস লিমিটেড জানিয়েছে, ক্রসফিলিং বন্ধ, ডিলার পর্যায়ে পরিবহন খরচ, অপারেশন ব্যয় ও চার্জ বৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়েছে। এছাড়া বেসরকারি কোম্পানির এলপিজির দাম তুলনামূলক বেশি—এ বিষয়টিও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশের মোট এলপিজি চাহিদার ৯৭-৯৮ শতাংশই আমদানিকৃত বিউটেন ও প্রোপেন থেকে আসে, যা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বোতলজাত করে বিক্রি করে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে বিইআরসি প্রতি মাসে সৌদি সিপিকে (চুক্তি মূল্য) ভিত্তি ধরে এলপিজির দাম নির্ধারণ করছে। সিপির দর ওঠানামা করলে ভিত্তিমূল্য ওঠানামা করে। অন্যান্য কমিশন অপরিবর্তিত থাকে।
২০২১ সালে বলা হয়েছিল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চড়া দামে আমদানি করলেও এলপি গ্যাস লিমিটেড দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে উপজাত হিসেবে অনেক কম দামে বিউটেন ও প্রোপেন সংগ্রহ করে। সে সময় বিইআরসি ফর্মুলা (না লোকসান না মুনাফা) অনুযায়ী সাড়ে ১২ কেজির দাম নির্ধারিত হয় ৬৯০ টাকা। ২০২৫ সালের ৪ মে গণশুনানি ছাড়াই দাম বাড়ানো হয়। সে সময় বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি কোম্পানির এলপিজির দামের কিছু প্যারামিটার পরিবর্তিত হয়েছে, তাই সমন্বয় করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ৪ মে গণশুনানি ছাড়াই ১২.৫ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৬৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮২৫ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। তখন এর প্রতিবাদ জানায় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। চলতি সেপ্টেম্বরে বেসরকারি পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ২৭০ টাকা। তবে বাজারে এ দামে গ্যাস পাওয়া যায় না, এলাকাভেদে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি গুনতে হয়।
এলপি গ্যাস লিমিটেডের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তারা ১২ হাজার ৭২৩ মেট্রিক টন এলপিজি বিক্রি করেছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীকে ৭২২ মেট্রিক টনসহ ৮৩৪ মেট্রিক টন পাইকারি সরবরাহ করেছে এবং বাকিটা বোতলজাত করে বিক্রি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এ সময় করপূর্ব মুনাফা করেছে ১০ কোটি ২ লাখ টাকা এবং করোত্তর নিট মুনাফা করেছে ৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। তবে বিইআরসি ফর্মুলা অনুযায়ী দাম বাড়ানোর সুযোগ আছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গণশুনানি ছাড়াই দাম বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ ক্যাব রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করেছে।
কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবে ডিলারদের পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে ডিলাররা পরিবহন খরচ ও কমিশন বাবদ ৪১ টাকা পান। সীমিত সিলিন্ডার পাওয়ায় তাদের খরচ উঠছে না, তাই আরও ১০০ টাকা দাম বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
দেশে বছরে ১৫ লাখ টনের বেশি এলপিজি চাহিদা থাকলেও এলপি গ্যাস লিমিটেড ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাত্র ১২ হাজার ৭২৩ টন সরবরাহ দিয়েছে। খুচরা বাজারে সরকারি এলপিজি দৃশ্যমান নয় বললেই চলে। বিপিসি ও কোম্পানির কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।