দেশের প্রবীণ আলেম ও মুহাদ্দিস, চট্টগ্রামের আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া মাদরাসার সদরে মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি আহমদুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮১ বছর। তিনি তিন ছেলে ও চার মেয়েসহ অসংখ্য শিষ্য, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। মরহুমের জানাজার নামাজ আজ রাত ৯টায় পটিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, হাফেজ আহমদুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। সর্বশেষ তিনি ব্রেইন স্ট্রোক করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কয়েকদিন আগে অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়।
আল্লামা মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহ ১৯৪১ সালের ১ মে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার নাইখাইন গ্রামের মোজাহেরুল্লাহ মুনশী বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মাওলানা ঈসা (রহ.) এবং মা দেশের প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিরি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মাওলানা আহমদ হাসান (রহ.)-এর কন্যা।
১৯৫১ সালে জিরি মাদরাসায় মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি পবিত্র কোরআন হেফজ করেন। এরপর দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন এবং প্রতিটি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের জামিয়া আশরাফিয়া লাহোরে পুনরায় দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন এবং বিশিষ্ট আলেমদের সান্নিধ্য লাভ করেন। পরের বছর মুলতানের খাইরুল মাদারিসে যুক্তিবিদ্যা, দর্শন ও কালাম অধ্যয়ন করেন।
১৯৬৭ সালে দারুল উলুম করাচি ইফতা বিভাগে ভর্তি হয়ে পাকিস্তানের মুফতিয়ে আজম আল্লামা মুহাম্মদ শফি উসমানি (রহ.)-এর কাছে ফিকহের পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ১৯৬৮ সালে দেশে ফিরে জিরি মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে ২৩ বছর অধ্যাপনা করেন। পরবর্তীতে শায়খুল হাদিস হিসেবে সহিহ বুখারির পাঠদান করেন।
১৯৯১ সালে পটিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করে সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মুফতি হিসেবে ৩০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালে তিনি শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি হিসেবে নিযুক্ত হন।
জীবনের প্রথম দিকে মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.)-এর কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত নেন এবং ১৯৮১ সালে তাসাউফের ইজাজত ও খেলাফত লাভ করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে: ‘দাফউল ইলতিবাস’, ‘মাশায়েখে চাটগাম’, ‘আন-নাফহাতুল আহমাদিয়্যাহ ফিল খুতুবাতিল মিম্বারিয়্যাহ’, ‘তাজকেরাতুন নুর’, ‘তাসকিনুল খাওয়াতির ফি শরহিল আশবাহি ওয়ান্নাওয়াযির’, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে শেয়ারবাজার ও মাল্টিলেবেল মার্কেটিং’, ‘যুগোপযোগী দশ মাসায়েল’, ‘মাজহাব ও মাজহাবের প্রয়োজনীয়তা’।