• ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরল পথে না হলে কী করবে এনসিপি?

শাপলা পেতে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ১৩:১১ অপরাহ্ণ
সরল পথে না হলে কী করবে এনসিপি?
সংবাদটি শেয়ার করুন....

প্রতীক হিসাবে শাপলা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। প্রতীক নিয়ে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন দলের বেশির ভাগ নেতা। সরল পথে দাবি আদায় না হলে রাজনৈতিক লড়াইয়ের দিকে হাঁটার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। শাপলা পাওয়া বা না পাওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান ও টিকে থাকার অগ্নিপরীক্ষা দিতে চায় এনসিপি।

প্রতীক হিসাবে শাপলা বরাদ্দ পেতে শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এছাড়া রাজপথে কর্মসূচির বাইরে আইনি লড়াইয়ের জন্য আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। মূল কথা শাপলা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীক গ্রহণ করা হবে না। এর শেষ না দেখা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এনসিপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে ‘জাতীয় ফুল শাপলা’ নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হতে পারে কিনা এ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলছেন শাপলা পেতে এনসিপি নেতারা যে ভাষায় কথা বলছেন তাও শিষ্টাচারের মাত্রা ছাড়িয়েছে। এক্ষেত্রে চাপের মুখে ইসি কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে নতি স্বীকার করলে ভবিষ্যতের জন্য এটি খারাপ নজির হয়ে যাবে।

এনসিপি সূত্র বলছে, শাপলা প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। এর আগে এনসিপির সঙ্গে ইসির একাধিক বৈঠকে শাপলা বরাদ্দের আশ্বাস দেওয়া হয়। এমনকি শাপলাকে প্রতীক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর ঘোষণা দেয় ইসি। তবে শেষ পর্যন্ত একটি প্রভাবশালী সংস্থার বাধার কারণে ইসি তার আগের অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসে। এটি মূলত নির্বাচন নিয়ে ফ্যাসিস্ট আমলের সেই পুরোনো ‘গেম’ ছাড়া আর কিছুই নয়।

সর্বশেষ বুধবার প্রতীক হিসাবে শাপলা বরাদ্দ পাওয়ার আইনি ব্যাখ্যা তুলে ধরে ইসি কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এতে বলা হয়, জাতীয় প্রতীকের চারটি স্বতন্ত্র উপাদানের মধ্যে শাপলা হচ্ছে একটি। কিন্তু অন্য উপাদানগুলোর মধ্যে বিএনপিকে ‘ধানের শীষ’ এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডিকে ‘তারা’ প্রতীক হিসাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এনসিপি নেতারা বলছেন, ‘শাপলা জাতীয় ফুল’ এমন অজুহাতও ধোপে টেকে না। কারণ জাতীয় ফল ‘কাঁঠাল’কে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতীক হিসাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আবার তৃণমূল বিএনপি নামের দলটিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক। সুতরাং ‘শাপলা’ জাতীয় ফুল হলেও দলের প্রতীক হিসাবে তালিকাভুক্ত হতে আইনগত কোনো বাধা নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক নেতা বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাইরে স্বাধীনতার কথা বললেও তারা পুরোপুরি একটি দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কারণ তারা হয়তো মনে করে নির্বাচন হলে তাদের পছন্দের দলটি ক্ষমতায় চলে আসবে। এ কারণে পদ-পদবির লোভে এখনই তারা নগ্ন পক্ষপাতের পথ বেছে নিচ্ছে। এতে সাংবিধানিক একটি প্রতিষ্ঠানে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এনসিপি। শেষ পর্যন্ত শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না পেলে রাজপথে কি ধরনের কর্মসূচি দেবেন এমন প্রশ্ন করা হলে দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব যুগান্তরকে বলেন, আশা করি ইসি বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেবে। তারা শেষ পর্যন্ত শাপলা বরাদ্দ দেবে। তবে যদি তা না হয় তাহলে আমাদের সামনে লড়াই ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। রাজনৈতিক লড়াই হবে দাবি আদায়ের শেষ পথ। আমরা রাজপথে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, শাপলা নিয়ে এনসিপি এখন যেভাবে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে এর আগে তা ছিল না। ২২ জুন দল নিবন্ধনের আবেদনেও শাপলার পাশাপাশি বিকল্প প্রতীক হিসাবে ‘কলম’ অথবা ‘মোবাইল’ উল্লেখ করা হয়। মূলত ২২ সেপ্টেম্বর থেকেই শাপলা নিয়ে এনসিপির কঠোর অবস্থানের প্রকাশ ঘটছে। এদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বৈঠক হয়। সেখানেই তিনি শাপলা নিয়ে নিজেদের কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দেন। পরে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও একই সুরে কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ১১৫টি প্রতীকের তালিকায় শাপলা নেই। নিয়মানুযায়ী রাজনৈতিক দলকে নির্ধারিত তালিকার ভেতর থেকেই প্রতীক নিতে হয়। তাই এনসিপিকে অন্য কোনো প্রতীক বেছে নিতে হবে।’ ইসির এমন ঘোষণার পরপরই এনসিপি নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

এদিন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, ‘যেহেতু কোনো আইনগত বাধা নেই, তাই এনসিপির মার্কা শাপলাই হতে হবে। অন্য কোনো অপশন নাই। শাপলা প্রতীক না পেলে নির্বাচন কীভাবে হয়, আর কে কীভাবে ক্ষমতায় গিয়ে মধু খাওয়ার স্বপ্ন দেখে, সেটা আমরাও দেখে নেব।’