• ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংসদ এলাকায় হচ্ছে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫, ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ
সংসদ এলাকায় হচ্ছে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন
সংবাদটি শেয়ার করুন....

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছিল গণভবন। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় গণভবনে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। সেই থেকে ভবনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এখন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় তৈরি হচ্ছে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের জন্য নির্মিত পাশাপাশি দুটি ভবনকে একীভূত করে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যাতায়াতের সুবিধার জন্য নির্মিত হবে দুই স্তরের করিডর।

বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অবস্থান করছেন। তবে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য স্থায়ী সমাধান খুঁজতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে যমুনা ও হেয়ার রোডের কিছু বাংলো নিয়ে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত সংসদ এলাকার স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত রোববার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব নজরুল ইসলাম, সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান এবং এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুব উস সামাদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভবন দুটি পরিদর্শন করে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও এলাকাটি একাধিকবার ঘুরে দেখেছেন।

সংসদ চত্বরে অবস্থিত লাল ইটের দোতলা দুটি ভবন ২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে নির্মিত হয়। তখন লুই আই কানের নকশা বিকৃত করার অভিযোগ ওঠে এবং হাইকোর্ট এগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করে। তবে ২০২২ সালে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেয়। সর্বশেষ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু ভবন দুটি ব্যবহার করতেন।

ভবন দুটি জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশে, আসাদ গেটের দিকে অবস্থিত। দুটি দোতলা ভবনের মাঝখানে একটি সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। একই আদলে নির্মিত এই ভবনগুলো চারদিক ঘেরা, সামনে খোলা জায়গা ও বাগান রয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে গণভবন নির্মাণ করা হয়, তবে তিনি কখনো সেখানে বসবাস করেননি। এরশাদের আমলে ১৯৮৫ সালে ভবনটি সংস্কার করে ‘করতোয়া’ নাম দিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবার সেটিকে গণভবন নাম দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বানায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কখনো গণভবনে থাকেননি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে গণভবন সংস্কার করে। ২০১০ সালের মার্চে শেখ হাসিনা সেখানে ওঠেন এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, জাতীয় সংসদ ভবন বিশ্বের অন্যতম সেরা স্থাপত্যকীর্তি। এ নকশায় হস্তক্ষেপ করলে স্থাপত্যের মান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেন।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সংস্কার খরচ তুলনামূলক কম হবে। দুটি ভবনকে সংযুক্ত করা ও নিরাপত্তা জোরদার করলেই এটি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। প্রয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবেও এটি কাজে লাগানো যেতে পারে।