পদ্মার রুপালি ঢেউ অবশেষে ভারতে এসে পৌঁছল। দুর্গাপূজার আগে প্রতীক্ষিত এই আগমনকে কেন্দ্র করে পাইকারি থেকে খুচরো বাজারে এক ধরনের উল্লাস শুরু হয়েছে।
বুধবার রাতেই সীমান্ত পেরিয়ে প্রথম চালানে এসেছে প্রায় ৩৭ মেট্রিক টন ইলিশ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলকাতা ও হাওড়ার বাজারে তার ঝলক দেখা গিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ যেন শুধু মাছের আগমন নয়, এটি উৎসবের আবহে জনমনে আশ্বাসের সঞ্চার। কয়েক মাস ধরেই জল্পনা চলছিল, এ বছর আদৌ কি ইলিশ আসবে, না কি সব জল্পনা ব্যর্থ হবে।
অবশেষে সরকারের অনুমতি মিলে গেছে, মোট ১২০০ মেট্রিক টন ইলিশ আসবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু এই অল্প সময়ে এত বড় চালান আসা ও বাজারে সঠিকভাবে পৌঁছনো কতটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রথম চালান ঢুকেছে সীমান্তে, ধাপে ধাপে আসবে আরও। কিন্তু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সময় কম থাকায় সব মাছ তোলা ও বিক্রি করা কঠিন হতে পারে। তার সঙ্গে রয়েছে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা।
ইতিমধ্যেই গুজরাটের ইলিশ বাজারে বেশ জায়গা করে নিয়েছে। ফলে পদ্মার ইলিশ দামে কিছুটা বেশি। পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকার দর উঠছে, খুচরো বাজারে সেই দাম বাড়বে আরও।
সাধারণ মানুষ হয়তো অনেকেই কিনতে পারবেন না। তবুও আবেগের জায়গায় পদ্মার ইলিশ অদ্বিতীয়। উৎসবের ভোজে পদ্মার ইলিশ না থাকলে যেন আনন্দ অসম্পূর্ণ থাকে। সেই কারণেই চাহিদা আগের মতোই রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগেভাগে অনুমতি পেলে পরিস্থিতি আরও সহজ হতো। এখন দেরিতে আসায় ক্রেতারা দাম নিয়ে সমস্যায় পড়বেন। তবুও এই মাছের আগমন নিয়ে বাজারে উচ্ছ্বাস আছে, কারণ সবাই জানে পদ্মার ইলিশ মানেই অন্য স্বাদ, অন্য সুবাস।
দক্ষিণবঙ্গের মানুষের কাছে এটি কেবল খাদ্য নয়, এটি ঐতিহ্য, স্মৃতির অংশ। এই আবেগের কারণে বাজারে সরবরাহ কম হলেও চাহিদা টিকে থাকবে। পাইকারি থেকে খুচরো সব বিক্রেতারাই তাই খুশি, কারণ তারা জানেন যে যত দামই হোক, ক্রেতারা কিনবেনই। প্রশ্ন শুধু এত অল্প সময়ে ১২০০ মেট্রিক টন সরবরাহ করা সম্ভব হবে কি না।
আরেকটি প্রশ্ন হলো দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে কি না। তবুও সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে পদ্মার রুপালি মাছ এসে পৌঁছেছে, সেটাই বড় খবর। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উৎসবের আবেগ, ক্রেতার প্রতীক্ষা আর বাজারের ভিড়।
এই আবেগই শেষ পর্যন্ত সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। তাই দাম বা সময়—সব সমস্যার মাঝেও পদ্মার ইলিশ নিয়ে আবারও উৎসবমুখর এই রাজ্যের বাজার।