• ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পবিত্র কোরআন: ইসলামী রাজনীতির অনন্য পথপ্রদর্শক

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:১৪ অপরাহ্ণ
পবিত্র কোরআন: ইসলামী রাজনীতির অনন্য পথপ্রদর্শক
সংবাদটি শেয়ার করুন....

ইসলামী রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থা শুধুমাত্র সামাজিক বা প্রশাসনিক কাঠামো নয়; এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান। পবিত্র কোরআনে রাজনীতি, শাসনব্যবস্থা, ন্যায়বিচার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাগরিক অধিকার ও অপরাধবিষয়ক বিধান স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এগুলোই ইসলামী শাসনের মূলনীতি। নবী করিম (সা.)-এর সুন্নাহ, সাহাবিদের ঐকমত্য (ইজমা), কিয়াস, জনস্বার্থ ও শরিয়াসম্মত রীতিনীতি থেকে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

এটি ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ নামে পরিচিত। পবিত্র কোরআনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনীতির উল্লেখ আছে। কোরআনের ভাষায়—‘বলে দাও, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু—সবই আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আর আমাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবং আমি প্রথম আত্মসমর্পণকারী।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২-১৬৩)

একজন প্রকৃত মুসলিম তখনই হতে পারে, যখন সে আল্লাহর সব আদেশের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস করো আর অন্য অংশে অস্বীকার করো? যারা এমন কাজ করে, তাদের জন্য দুনিয়াতে অপমান ছাড়া আর কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর তোমরা যা করো, আল্লাহ তা থেকে অজ্ঞ নন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৮৫-৮৬)

পবিত্র কোরআনে ইসলামী রাজনীতির মূলনীতি

শাসনব্যবস্থার কর্তৃত্ব আল্লাহর: পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিঃসন্দেহে সৃষ্টি ও আদেশ শুধু তাঁরই (আল্লাহর)।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৪) একজন প্রকৃত মুমিন আল্লাহর বিচারের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে। আল্লাহ বলেন, “মুমিনরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে ডাকা হলে বলে—‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫১) এবং ‘যারা আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তার দ্বারা বিচার করে না, তারা জালিম।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৫)

রাষ্ট্রক্ষমতা পবিত্র আমানত: নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতগুলো প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)

ন্যায়বিচারের সঙ্গে শাসন পরিচালনা: ইসলামের চোখে নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় বা শত্রুর ক্ষেত্রেও ন্যায়বিচার জরুরি। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহর জন্য দৃঢ়ভাবে ন্যায়বিচারক সাক্ষ্যদাতা হও। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের ন্যায়বিচার থেকে বিরত না করে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮)

শাসকের প্রতি শাসিতের আনুগত্য: শাসকদের ন্যায়বিচারের প্রতিদানে তাদের আনুগত্য বাধ্যতামূলক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহর আনুগত্য করো, রাসুলের আনুগত্য করো এবং যারা কর্তৃত্বশীল তাদেরও।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৯) তবে অবাধ্যতা, জুলুম বা কুফরির ক্ষেত্রে আনুগত্য বৈধ নয়।

শুরার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা: আল্লাহ বলেন, ‘আপনি তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরামর্শ করুন।’ (সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

সংযম, আত্মরক্ষা ও যুদ্ধ: মুসলমানদের ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে যতক্ষণ না প্রতিরোধের ক্ষমতা হয়। যখন শক্তি অর্জন হবে, তখন আত্মরক্ষার অনুমতি রয়েছে। ‘যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে, তাদের যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৯) এবং ‘আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো তাদের সঙ্গে যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, সীমা অতিক্রম কোরো না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯০)

শান্তিচুক্তি ও অমুসলিম নাগরিকদের মর্যাদা: মুসলিম রাষ্ট্রের স্বার্থে শান্তিচুক্তি বৈধ ও উত্তম। সংখ্যালঘুদের সামাজিক অধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)

সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা: দ্বন্দ্বে লিপ্ত মুমিনদের মীমাংসা করাতে হবে। (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৯)

শাস্তি ও হকদানের বিধান: চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস ও দেশের অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কঠোর শাস্তি প্রযোজ্য। (সুরা : মায়িদাহ, আয়াত : ৩৩, ৩৮) পাশাপাশি হকদারকে তার হক যথাসময়ে প্রদান করতে হবে। (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৪১)

সুতরাং ইসলামী রাজনীতি শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়; বরং এটি ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।