• ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঋণ দিয়ে ৫ প্রতিষ্ঠান থেকেই ২১৩ কোটি টাকা ঘুষ নেন সাইফুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ১০:১১ পূর্বাহ্ণ
ঋণ দিয়ে ৫ প্রতিষ্ঠান থেকেই ২১৩ কোটি টাকা ঘুষ নেন সাইফুজ্জামান
সংবাদটি শেয়ার করুন....

প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসায়ীদের ডেকে এনে ঘুষ আদায়, না দিলে গুম ও ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি—এভাবেই ভয়ভীতি দেখিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পতিত শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ঘুষের টাকা তিনি সংগ্রহ করতেন নিজের স্ত্রীকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান বানিয়ে, সেই ব্যাংক থেকেই ঋণ অনুমোদন করিয়ে। ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে সেই ঋণের অর্থ চেকের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতেন জাবেদকে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে প্রকাশ পেয়েছে, পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তিনি মোট ২১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

দুদকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে মামলার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে এবং কমিশনের অনুমোদনও পাওয়া গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) মামলাটি দায়ের হবে। দুদক আরও জানিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ তদন্তে আরও অনেক ঘটনার তথ্য মিলতে পারে।

তদন্ত নথি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ১১ মে থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ইউসিবি পিএলসির চেয়ারম্যান ছিলেন জাবেদের স্ত্রী রুকমীলা জামান। তবে তিনি কার্যত অফিসে যেতেন না। চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে কাজ করতেন জাবেদ নিজেই। ব্যাংকের বোর্ড সভাতেও সভাপতিত্ব করতেন তিনি। রেজ্যুলেশন লেখা হলে গুলশানের বাসা থেকে তার স্ত্রীর স্বাক্ষর এনে দিতেন পিয়ন। এভাবে স্ত্রীকে নামমাত্র চেয়ারম্যান বানিয়ে পুরো ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতেন জাবেদ।

প্রথমে ব্যবসায়ীদের ডেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করতেন তিনি। টাকা না দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে তুলে নেওয়া ও ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতেন। পরে নিজেই ব্যবসায়ীদের দিয়ে ঋণের আবেদন করিয়ে সেই টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে নিতেন নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন হিসাবে।

  • থার্মেক্স নেট ইয়ার্ন (৫২ কোটি টাকা): ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর ইউসিবির গুলশান কার্যালয়ে ডেকে এমডি আব্দুল কাদের মোল্লার কাছে প্রথমে ৫০ কোটি টাকা দাবি করেন জাবেদ। চাপের মুখে কাদের মোল্লা ২০২১ সালের নভেম্বরের মধ্যে ২৭ কোটি ও ২০২২ সালের জুলাইয়ে আরও ২৫ কোটি টাকা দেন। এ ঘটনায় কাদের মোল্লা আদালতে মামলা করেছেন এবং তদন্তে এর সত্যতা মিলেছে।

  • এইচ এম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ (৫৫ কোটি টাকা): ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ধাপে ৩৫ কোটি ও দ্বিতীয় ধাপে ২০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করিয়ে জাবেদ বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ঘুষ হিসেবে নেন। ওই অর্থ পরে তার মালিকানাধীন আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়ামের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

  • ওয়াল মার্ট (৫ কোটি টাকা): ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকা ঋণ পায়। পরে ওই ঋণের অংশ হিসেবে জাবেদের ঘনিষ্ঠ কর্মচারীর হিসাবে ৫ কোটি টাকা জমা করা হয়।

  • সাইফ পাওয়ারটেক ও ই-ইঞ্জিনিয়ারিং (৪১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা): ২০২০ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩৫ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুরের পর ২৯টি কিস্তিতে চেক, নগদ ও ভাউচারের মাধ্যমে ঘুষ আদায় করেন জাবেদ।

  • বেস্ট সার্ভিস লিমিটেড (৬০ কোটি টাকা): ২০২২ সালের জুনে ৬০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের পর ওই টাকা থেকে নগদ উত্তোলন ও লেনদেনের মাধ্যমে ২১টি ট্রান্সজেকশনে জাবেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট হিসাবে পাঠানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের চারটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের নম্বরে কল ঢুকলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।