গাজীপুর মহানগরের পূবাইল এলাকায় শাকিল বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শাকিলের নেতৃত্বে একাধিক চাঁদাবাজ বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচার চালিয়ে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সে। টাকা না দিলে শুরু হয় মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ।
এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টঙ্গী-গাজীপুর এলাকার সিনিয়র সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, চাঁদাবাজি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে আনন্দ টিভির সাবেক ডিএনই প্রশান্তকুমার দাস চাকরি হারালেও শাকিলের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সে বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। আনন্দ টিভি কর্তৃপক্ষ কেন এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
এছাড়া তারা আরও বলেন, সম্প্রতি আনন্দ টিভির উত্তরা তুরাগ থানার প্রতিনিধি চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হওয়ার পর সাময়িক বরখাস্ত হন। কিন্তু শাকিল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কল রেকর্ডসহ একাধিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তার চাঁদাবাজির কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, শাকিল, সুজন, নোমান ও মারুফ মিলে সিন্ডিকেট তৈরি করে ব্যবসায়ীদের নিয়মিত হয়রানি করছে।
বিশেষ করে টঙ্গীর জাবান হোটেলের বর্তমান পরিচালকের কাছ থেকে তারা সরাসরি ও ফোনে চাঁদা দাবি করছে। গভীর রাতে হোটেলে বিদেশি অতিথিদের হয়রানি, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, শাকিল বাহিনী তাদের নিকট ৫ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় হোটেলের নামে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে, যেখানে পুরোনো ফুটেজ ব্যবহার করা হয়।
তারা আরও বলেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, কিন্তু নামধারী কিছু ব্যক্তি এটিকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। ব্যবসায়ীরা এই সংঘবদ্ধ চক্র থেকে মুক্তির জন্য সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
গাজীপুর মহানগর ৫১ নং ওয়ার্ডের মো. মিজানুর রহমানের ছেলে শাকিলের টিমে রয়েছে সুজন, নোমান ও মারুফসহ কয়েকজন সহযোগী। আনন্দ টিভির প্রতিবেদক পরিচয়ে সে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষ ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পূবাইল এলাকার সাংবাদিকদের দাবি, শাকিল একজন অপেশাদার ও বিতর্কিত ব্যক্তি। পেশাদার সাংবাদিকদের মর্যাদাকে ব্যবহার করে সে একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলেছে।
ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে শাকিল ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, শাকিল বাহিনী বিভিন্ন দপ্তরে কখনো দুদক কর্মকর্তা, কখনো সাংবাদিক বা পুলিশের পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে।
গত ২৭ এপ্রিল ২০২৫ পূবাইল থানায় দায়ের করা এক অভিযোগে খিলগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সোলাইমান জানান, শাকিল তার নিকট ১০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তার ও পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রচারের হুমকি দেয়। ওইদিন শাকিল সোলাইমানের সামনে ভিডিও ধারণ করতে থাকলে তিনি কারণ জানতে চাইলে শাকিল বলেন, “বাঁচতে চাইলে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আমার বাসায় আসবেন, না হলে সংবাদ প্রচার হবে।”
তদন্তে জানা যায়, শাকিল পূর্বে এক নারী সাংবাদিককে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। এমনকি ২০২৩ সালে পূবাইলে চাঁদাবাজির সময় গণপিটুনির শিকার হওয়ার ঘটনাও রয়েছে।