এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনীতি দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থী যাচাই বাছাই করতে দেশব্যাপী একাধিক জরিপ সম্পন্ন করেছেন,আর যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত রয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইল -৪ কালিহাতি আসনেও বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের হাইকমান্ডে দৌড়ঝাঁপ শুরু করার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে জনসংযোগসহ প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ৭ মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরা হচ্ছেন,পেশাজীবী সংগঠন ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শাহ আলম তালুকদার,বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য বিজেএমসির সাবেক সহসভাপতি মোঃ লুৎফর রহমান মতিন,বিএনপি ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক,বেনজির আহমেদ টিটু,মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি, ইন্জিনিয়ার বাদলুর রহমান খান বাদল,ঢাকা মহানগর জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইন্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল হালিম মিঞা, কালিহাতি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শুকুর মাহমুদ,কালিহাতি জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি, তুখোর বক্তা মোজাম্মেল হক হিরু এবং পেশাজীবী সংগঠনের নেতা প্রফেসর একেএম আব্দুল আওয়াল ।
স্বাধীনতার পর থেকেই কালিহাতী সংসদীয় আসনটি দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এখানে রাজনৈতিক দলের বিপরীতে ব্যক্তি নির্ভর ভোটের রাজনীতির প্রচলন লক্ষ্য করা যায়,এখানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আবির্ভূত হন স্বাধীনতার ইস্তেহার পাঠক সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত শাজাহান সিরাজ ও আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কৃত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
১৯৭৩ এর জাতীয় নির্বাচনে আলীগের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সাথে হেরেছিলেন শাজাহান সিরাজ (যদিও ওই নির্বাচন নিয়ে পেশীশক্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে) তারপর ৭৯ এর নির্বাচনে শাজাহান সিরাজ জাসদ থেকে নির্বাচিত হন। ৮৬ সনে লতিফ সিদ্দিকী জেলে থাকায় তার স্ত্রী বেগম লায়লা সিদ্দিকী সতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে শাজাহান সিরাজকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৮৮ ও ৯১ সনে শাজাহান সিরাজ জাসদ থেকে নির্বাচিত হন ৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত ) নির্বাচনে শাজাহান সিরাজ বিএনপি হতে এবং ৯৬ এর নির্বাচনে আলীগ হতে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং ২০০১ এর নির্বাচনে বিএনপি হতে শাজাহান সিরাজ নির্বাচিত হন, ২০০৮ এর নির্বাচনে আলীগ হতে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং ২০১৪ সনে আলীগ হতে বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচিত হন।
ইসলাম ধর্ম, তাবলীগ ও হযরত মোহাম্মদ(সঃ)কটুক্তির কারণে আলীগ বহিস্কৃত হয়ে মন্ত্রীত্ব হারিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। যারফলে ২০১৫ সালের উপ নির্বাচনে শক্তিশালী কোন প্রার্থী না থাকায় অনেকটা সহজেই আলীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুহাম্মদ হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী, ২০১৮ সনের রাতের ভোটে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুহাম্মদ হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী,২০২৪ এর ডামি নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন করেনি।
আগামীর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা করছেন— দলের ত্যাগী, জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার, সৎ-আদর্শবান, ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী, সাধারণ মানুষসহ সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এবং ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদেরকে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করবেন। এ লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খুঁজতে দেশের প্রতিটি আসনে মাঠ পর্যায়ে প্রার্থীতা জরিপ ও বায়োডাটা সংগ্রহের কাজ করছে বিএনপি।
কালিহাতিতে কে পাচ্ছেন বিএনপি দলীয় মনোনয়ন সে সমীকরন খুবই জটিল ও কঠিন বিষয় ।তার পরও স্থানীয় বিএনপি কর্মী ও সমর্থকদের অধিকাংশের অভিমত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষণানুযায়ী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শাহ আলম তালুকদার পেশাজীবী সংগঠনের নেতা হিসাবে এবং দলের প্রতি তার ত্যাগ ও তিনি চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত থাকার সুযোগের কারনে এলাকার সাধারন মানুষের কাছে দীর্ঘদিন বিনামুল্যে বা স্বল্পমুল্যুে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সাধারণ মানুষের মনজয় করে, এবং করোনা মহামারি কালিন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকায় কাজ করেছেন এবং অসচ্ছল মানুষকে আর্থিক সহযোগিতা করে তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তারা মনে করেন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শাহ আলম তালুকদারকে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রদান করলে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে অনায়াসেই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
অপরদিকে ২০০৮ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিনের অনুসারীরা মনে করেন দলের জন্য মতিন সাহেবের ত্যাগ ও তার সততা বিবেচনায় এনে দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।
বিএনপি ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তুখোর ছাত্রনেতা বেনজির আহমেদ টিটুর সমর্থকরা মনে করেন বয়সে তরুন এবং ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত বেনজির আহমেদ টিটু দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী ।ঢাকা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্জিনিয়ার আব্দুল হালিম মিঞার অনুসারীদের ধারনা যেহেতু ২০১৮ সালে বিএনপি তাকে মনোনয়ন দিয়েছিল এবং জোটের কারনে কালিহাতি আসনটি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই বিবেচনায় ইন্জিনিয়ার আব্দুল হালিম মিঞাকেই এবার বিএনপি মনোনয়ন দিবেন। কালিহাতি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর মাহমুদের অনুসারীরা ভাবছেন জনপ্রিয়তার কারনেই বিএনপি শুকুর মাহমুদকে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করবেন।
বিএনপি মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি ইন্জিনিয়ার বাদলুর রহমান খান বাদলের সমর্থকরা ভাবছেন, দলের জন্য ত্যাগ ও প্রবাসে দলকে সসুসংগঠিত করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলের ভাবমূর্তি উজ্জীবিত করার সুবাদে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন ।
কালিহাতি উপজেলা ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি তুখোর বক্তা কারানির্যাতিত নেতা মোজাম্মেল হক হিরু বিএনপি দলীয় মনোয়ন পেতে বিএনপি হাই কমান্ডে লবিং চালানোর পাশাপাশি এলাকায় জনসংযোগের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
পেশাজীবি সংগঠনের নেতা, কারানির্যাতিত অধ্যাপক একেএম আব্দুল আওয়াল দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে লবিংসহ এলাকায় জনসংযোগ করে যাচ্ছেন।