• ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আজ

বেড়েছে নারী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা, নারীবিদ্বেষী মনোভাব

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আজ
সংবাদটি শেয়ার করুন....

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার কামারপট্টি এলাকায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে মারধর ও স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায় চলতি বছর ৩০ জুন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ১৯ মার্চ রাজধানীর মিরপুরে এক নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। পল্লবী থানার বালুরঘাট এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে তাকে রাতভর আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। প্রতিদিনই এমন ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মোট ৫২৮ জন নারী ও কন্যা শিশু নানা কারণে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিনই দুই জনের বেশি নারী বা কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ (২৪ আগস্ট) দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘ইয়াসমিন হত্যা দিবস’ বা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস।

১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরে কিশোরী ইয়াসমিনকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ধর্ষণ ও হত্যার পর আন্দোলনে নামে স্থানীয়রা। বিক্ষুব্ধ জনতাকে ঠেকাতে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ, নিহত হয় সাতজন। এরপর থেকে দিনাজপুরে দিনটি ‘ইয়াসমিন হত্যা দিবস’ আর সারা দেশে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

পরিসংখ্যান ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে

মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৫৪ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৬ জন। ২০২৪ সালের একই সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ৪৯৮ জন নারী ও কন্যা। তুলনায় এ বছর ধর্ষণ বেড়েছে ১২ শতাংশেরও বেশি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ইয়াসমিন হত্যার ৩০ বছর পরও ধর্ষণ বা নারী নির্যাতন কমেনি, বরং আরও নিষ্ঠুর আকার ধারণ করেছে। কন্যাশিশু ধর্ষণ বেড়েছে, ভয়াবহতা বেড়েছে। তার মতে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ ছাড়া নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়।

ঘরেই বেশি নির্যাতনের শিকার নারী

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত স্বামীর হাতে ১৩৩ জন নারী খুন হয়েছেন। স্বামীর পরিবারের হাতে নিহত হয়েছেন ৪২ জন এবং নিজ পরিবারের হাতে নিহত হয়েছেন ৩৩ জন। এ সময়ে পারিবারিক সহিংসতায় ৩২২ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে।

আসকের চেয়ারপার্সন ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, স্বামীর হাতে নারীরা কখনোই নিরাপদ ছিলেন না। পুরুষশাসিত সমাজের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না।

হেল্পলাইনে কলের ঢল

জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ চলতি বছরের আট মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনায় এসেছে ১৭ হাজার ৩৪১টি কল। এর মধ্যে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ৯ হাজার ৩৯৪টিতে। এছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন ‘১০৯’-এ সাত মাসে সহায়তা চেয়ে কল এসেছে ৪৮ হাজার ৭৪৫টি।

আইন ও নীতি বাস্তবায়ন জরুরি

মহিলা পরিষদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে মোট ২ হাজার ৫২৫ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হন ৫১৬ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২৩ জনকে এবং ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেন ৬ জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ড. তৌহদুল ইসলাম বলেন, নারী নির্যাতন রোধে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে।