প্রেম করে বিথি আক্তারকে বিয়ে করেন ফারুক হোসেন। তার সেই সম্পর্ক বেশি দিন মধুর হয়নি। পারিবারিক কলহের জেরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢুকে প্রকাশ্যে স্বামীকে গালমন্দ ও মারধর করেন বিথী। হাসপাতালে আসা লোকজন স্ত্রীর হাতে স্বামীর মার খাওয়ার ঘটনা মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
গত রোববার দুপুরে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। ফারুক ও বিথী দুজনেই উপজেলা কমপ্লেক্সের স্টাফ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, অল্প বয়সি এক তরুণীর হাত থেকে সাদা শার্ট পড়া এক যুবক ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। একপর্যায়ে ফোনটি নেওয়ার পর ওই নারী উত্তেজিত হয়ে খারাপ ভাষায় গালমন্দ করে যুবকের পিঠে কিল-ঘুষি মেরে মাথার চুল ধরে টানতে থাকেন। এরপর তরুণী স্বজোড়ে যুবকের গায়ে লাথি মেরে বলতে থাকেন ‘এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক’।
ওই নারীকে ভাষা খারাপ করে গালি দিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘তুই আমার জীবনডারে শেষ করে দিসিছ কুত্তার বাচ্চা’।
হাসপাতালে আগত অনেকে বিষয়টি ভিডিও ধারণ করছিল। ওই স্থানের একটি কক্ষে বসে রোগী দেখছিলেন চিকিৎসক মো. এনামুল হক। কক্ষ থেকে বের হয়ে তাদের উভয়কে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন তিনি।
জানা গেছে—মারধরের শিকার ওই যুবকের নাম ফারুক হোসেন। তিনি পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। আর ওই তরুণীর নাম বিথি আক্তার ওরফে মিষ্টি। তিনি জেলার কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের কাটাবাড়িয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। তিনি বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউট সোর্সিংয়ের চাকরি করেন।
খবর পেয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে গেলে ফারুক হোসেন তাদেরকে জানান, কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করাকালে ওই তরুণীর সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে রাজবাড়ী আদালতে মামলা করেন বিথী। সেই মামলায় জামিনে আসার পর আরও চারটি মামলা করেন তিনি। একপর্যায় বিয়ে করলে সব মামলা তুলে নেবেন বলে জানান। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিয়ে করলেও মামলা না তুলে উল্টো নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন বিথী।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই তরুণী বলেন, ফারুক আমার স্বামী। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ওই ভাবে নেই। আমাদের বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে আদালতে মামলা পর্যন্ত চলছে। তার সঙ্গে দীর্ঘদিন আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আমার সঙ্গে যখন ভালো সম্পর্ক ছিল তখন আমাদের কিছু ব্যক্তিগত ছবি ছিল। সেগুলো নিয়ে এখন তিনি আমাকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করছেন।
এ বিষয়ে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. এনামুল হক যুগান্তরকে বলেন, কক্ষে বসে রোগী দেখছিলাম। দুপুর সোয়া ১টার দিকে চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পাই। বাইরে এসে দেখি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ফারুকের সঙ্গে এক তরুণী গালমন্দ করে উচ্চবাচ্য করছেন। একপর্যায় ফোন নিয়ে দুজনে কাড়াকাড়ির পর তরুণী ফারুককে কয়েক দফা মারধর করেন। পরে জানতে পারি তারা স্বামী-স্ত্রী। তবে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক নেই। হাসপাতালে ঝামেলা না করে বাড়িতে গিয়ে করার কথা বলে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে প্রকাশ্যে স্বামীকে এভাবে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় আমি নিজেও লজ্জিত। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা একদিনের প্রশিক্ষণে বাইরে থাকায় তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি হাসপাতালে উপস্থিত হওয়ার পর করণীয় কিছু থাকলে দেখবেন।