
আজ সোমবার বিশ্ব হার্ট দিবস। ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের উদ্যোগে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। জনসাধারণের মধ্যে হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ প্রচারের জন্য প্রতিবছরের মতো এবারও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশনসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সভা, সেমিনার ও র্যালির আয়োজন করেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে রোগী ও তাদের পরিবার চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে আরও সচেতন হবে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো—‘প্রতিটি হৃদস্পন্দনই জীবন’।
বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ মৃত্যুর শীর্ষ কারণ। তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ এ রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বেশি। সচেতনতার অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ফাস্টফুড খাওয়া, ব্যায়াম ও খেলাধুলার অভাব এবং মাদকাসক্তি এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত। তরুণদের মধ্যেও এ রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। জন্মগত কারণেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু চিকিৎসাব্যবস্থা চাহিদার তুলনায় সীমিত।
রাজধানী ঢাকায় তুলনামূলকভাবে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা থাকলেও বাইরে তা অপ্রতুল। প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে রোগীরা ঢাকায় আসছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি হওয়া কিংবা বেড পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীর চাপে সংকটে পড়েন।
আগারগাঁওয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, সীমিত জনবল দিয়ে বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা করা হলেও সবাইকে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। এ রোগ প্রতিরোধই উত্তম ব্যবস্থা উল্লেখ করে তিনি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সীমিত জনবল ও সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ডাক্তার-নার্সরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আরও ক্যাথল্যাব স্থাপন প্রক্রিয়াধীন।
মুগদা, মিটফোর্ড, কুর্মিটোলা হাসপাতালসহ রাজধানীর ২৫টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা পাওয়া যায়। ঢাকার বাইরে কেবল কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ ও বেসরকারি হাসপাতালে এই ব্যবস্থা আছে। ফলে সংকটাপন্ন অনেক রোগী ঢাকায় আসার পথে মারা যান।
সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল সাফি মজুমদার বলেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, চর্বিযুক্ত খাবার এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে হৃদরোগ বাড়ছে। সচেতন হলেই এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। অসচেতনতার কারণেই এটি নীরব ঘাতক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার যদি ঢাকার বাইরে চিকিৎসাব্যবস্থা সম্প্রসারণ করে, তাহলে গ্রামাঞ্চলের রোগীরাও হাতের কাছে সুচিকিৎসা পাবে। এতে ব্যয় কমবে এবং রোগীদের রাজধানীতে ছুটতে হবে না।