গত শুক্রবার ছিল ভারতের সংগীত জগতের জন্য আরেকটি বিষাদময় দিন। আবেগ, প্রেম, প্রতিবাদ ও সুরের এক অপূর্ব সমন্বয় জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গার্গ প্রয়াত হয়েছেন। তার কণ্ঠে যেমন ছিল স্থানীয় মাটির গন্ধ, তেমনি ছিল আধুনিক সুরের ছোঁয়া। ভক্তদের কাছে তিনি কেবল একজন শিল্পী নন, ছিলেন যুগের প্রতীক, আবেগের আরেক নাম।
অনেকের মতে, ভূপেন হাজারিকার পর আসামের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে নতুন আলো দেখিয়েছেন জুবিন। সুরের মায়া ও সৃষ্টিশীলতার কারণে তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের সংগীত জগতে অমলিন নাম হয়ে ওঠেন।
কিন্তু মাত্র ৫২ বছর বয়সে হঠাৎই থেমে গেল তাঁর জীবনযাত্রা। সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মৃগীরোগে আক্রান্ত হয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারালেন এই তারকা।
হঠাৎ মৃত্যুতে স্তব্ধ আসাম, হতভম্ব পুরো ভারতীয় সংগীতপ্রেমী সমাজ।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, ডাইভিং চলাকালীন হঠাৎ জ্ঞান হারান জুবিন। উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিলেও আর বাঁচানো যায়নি। আবারও মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি, যা আগের চোটের জায়গার সঙ্গে মিলে যায়।
চিকিৎসকদের মতে, মৃগীরোগে আক্রান্ত কারও জন্য পানির নিচে যাওয়া ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ হঠাৎ খিঁচুনি দেখা দিলে প্রাণ বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে।
এ কারণে তাঁর মৃত্যু ঘিরে এখন একটাই প্রশ্ন—তিনি কেন এ ধরনের ঝুঁকি নিলেন? দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার কথা জেনেও তাঁকে কি পরিবার, বন্ধু বা চিকিৎসক কেউ থামাননি? নাকি নিজের জেদের কাছে হার মেনেছিলেন শিল্পী?
প্রায় তিন বছর আগে ডিব্রুগড়ের এক রিসোর্টে বাথরুমে পড়ে গুরুতরভাবে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন জুবিন। চিকিৎসকেরা তখনই স্পষ্ট করেন, তাঁর মৃগীরোগ আছে এবং সেটিই দুর্ঘটনার কারণ। সেই আঘাত থেকে সুস্থ হলেও শারীরিক দুর্বলতা বাড়তে থাকে। মঞ্চে গান গাওয়ার সময় কণ্ঠ কেঁপে ওঠা বা শ্বাসকষ্ট ছিল নিয়মিত ঘটনা।
তবু তিনি থেমে যাননি—ভক্তদের জন্য গান গেয়ে গেছেন শেষ পর্যন্ত।
ভক্তদের মনে এখন শোকের পাশাপাশি ক্ষোভও রয়েছে। গুয়াহাটির এক তরুণ ভক্ত আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, “জুবিনদা তো আমাদের প্রাণ। তিনি জানতেন অসুখ আছে, তবু কেন গেলেন ডাইভিংয়ে?” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে লিখেছেন—একজন জনপ্রিয় পাবলিক ফিগার হিসেবে তাঁকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। আবার অনেকেই মনে করেন, স্বভাবতই বিদ্রোহী ছিলেন জুবিন, তাই বাঁধাধরা নিয়মে নিজেকে আটকে রাখতে চাননি।
১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর জন্ম নেওয়া জুবিন ছিলেন নানা প্রতিভার অধিকারী। ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত যুব মহোৎসব পাশ্চাত্য একক পরিবেশনায় স্বর্ণপদক লাভ করার পর জুবিনের জীবনের মোড় পাল্টে যায়। ১৯৯২ সালে অসমীয়া অ্যালবাম ‘অনামিকা’ মুক্তির মাধ্যমে জুবিন পেশাদার সংগীত জগতে প্রবেশ করেন। ২০০৬ সালে অনুরাগ বসুর ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমার ‘ইয়া আলী’ গানে কণ্ঠ দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন জুবিন।