বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, যেসব ব্যক্তি এ বছর চামড়া সংরক্ষণ করেছেন, তারা পরবর্তীকালে ভালো মূল্য পেয়েছেন। যার ফলে চামড়া সংরক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে অংশগ্রহণ না করা ব্যক্তিদের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য তৈরি হয়েছে। তাই তিনি মনে করেন আগামী বছর সরকার সহযোগিতা করলে আরও বেশি মানুষ চামড়া সংরক্ষণে আগ্রহ দেখাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আজ বুধবার কোরবানির বিষয়াদি নিয়ে আয়োজিত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটির তৃতীয় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা সভার সভাপতিত্ব করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু সুফিয়ান।
বৈঠকে জানানো হয়, গত ঈদ-উল-আযহায় অভ্যন্তরীণ বাজারে বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়। কোরবানিকৃত পশুর সংখ্যা ছিল ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি। এর মধ্যে মাদ্রাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং ও স্থানীয় ট্যানারিদের মাধ্যমে ৬০ লাখ ৪৫ হাজার ২২০টি চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে।
মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলোতে সংরক্ষিত চামড়ার সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৫১টি। সর্বাধিক চামড়া সংরক্ষণ হয় চট্টগ্রাম বিভাগে — ১৫ লাখ ৪৮ হাজারটি, ঢাকায় ১৪ লাখ ৯ হাজারটি এবং রাজশাহীতে ১৩ লাখ ৯০ হাজারটি।
সভায় কোরবানির চামড়া ব্যবস্থাপনায় কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়, যেমন: পশুর হাট ব্যবস্থাপনা, অননুমোদিত হাট অপসারণ, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হওয়া, নির্দিষ্ট অবকাঠামোর অভাব, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা, ট্যানারির সক্ষমতা, নীতিমালার অভাব, এবং চামড়া সংরক্ষণের স্থায়ী অবকাঠামোর সংকট।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ পেশ করা হয়:
-
(ক) স্থানীয় সরকার বিভাগ কোরবানির পশুর হাট পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে;
-
(খ) কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (SOP) তৈরি করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে তা অনুসরণে নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে;
-
(গ) চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে;
-
(ঘ) গবাদিপশুর রোগবালাই প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো যেতে পারে;
-
(ঙ) জেলা পর্যায়ে ব্যবসায়ী ও কসাইদের ডাটাবেজ তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে;
-
(চ) ট্যানারিগুলোকে কোরবানির মৌসুমে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ চামড়া প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম করে তুলতে হবে;
-
(ছ) ঢাকার আশেপাশে চামড়া সংরক্ষণের জন্য স্থান বরাদ্দ দিয়ে অবকাঠামো তৈরি করা যেতে পারে।