
উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে এনামুল হক নামের এক ব্যবসায়ীকে কিডন্যাপ করে দর্পণ প্রজেক্টের ভেতরে নিয়ে আটকে রেখে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কথিত জামাত নেতা শাহ মোঃ ফয়সাল বিন রহমানের বিরুদ্ধে।
ইঞ্জিনিয়ার শাহ ফয়সাল বিন রহমান দর্পণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। জানা যায়, গত ১৩/১০/২০২৫ ইং তারিখ দুপুরের দিকে উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে শাহ ফয়সাল বিন রহমান দলবল নিয়ে এনামুল হককে কিডন্যাপ করে গাড়িতে তুলে কালিয়ারটেক তার আস্তানায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে সারারাত আটক রেখে কয়েক দফা শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এতে তার পা ভেঙে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন সৃষ্টি হয়।
ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর, ১৪/১০/২০২৫ ইং তারিখে ভুক্তভোগীর স্ত্রী সাজেদা আফরিন তার স্বামীর কিডন্যাপের বিষয়টি জানতে পেরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। খবর পেয়ে তুরাগ থানার অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে পুলিশ সদস্য এসআই শ্বাসত দত্ত তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন। তিনি প্রথমে ভুক্তভোগীর স্ত্রীকে ঘটনাস্থলে পাঠান এবং পরে নিজে উপস্থিত হয়ে এনামুল হককে উদ্ধার করেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা ৬টার দিকে দর্পণ প্রজেক্ট থেকে এনামুলকে উদ্ধার করে তুরাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এনামুল হক বাদী হয়ে ফয়সালসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তুরাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দর্পণ গ্রুপের এমডি ফয়সাল বিন রহমান তার সহযোগীদের নিয়ে উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন আরজ আলী মেম্বার রোড থেকে জোরপূর্বক এনামুল হককে গাড়িতে তুলে নয়ানগর পুরান কালিয়ারটেকের দর্পণ প্রজেক্টে নিয়ে যান। সেখানে তাকে কিল-ঘুষি মারার পর ফয়সাল লোহা ও শক্ত কাঠ দিয়ে তার পায়ে আঘাত করেন। এতে তার পায়ের উরু ও গোড়ালি গুরুতর জখম হয়।
ঘটনা জানতে পেরে তার স্ত্রী সাজেদা পুনরায় ৯৯৯-এ ফোন করলে তুরাগ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় এনামুলকে উদ্ধার করে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠায়। পরে আত্মীয়স্বজনরা তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করান।
অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শ্বাসত দত্ত চৌধুরী দৈনিক ভোরকে জানান, দর্পণ প্রজেক্ট থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এনামুল হককে উদ্ধার করা হয়েছে। তার পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমি দখল করে গড়ে উঠেছে দর্পণ প্রজেক্ট। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল বিন রহমান, আর পরিচালক পর্যায়ে রয়েছেন মোবিনসহ আরও কয়েকজন। তারা নিজেদেরকে জামাত নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, দলের প্রভাব খাটিয়ে এলাকার নিরীহ মানুষের জমি কম দামে লিখে নিয়ে পরবর্তীতে বাকি টাকা না দিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, দর্পণ প্রজেক্টের এমডি ফয়সাল তাদের জমিতে প্রবেশ করতে দেন না। স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, তার পরিচিত কয়েকজনের জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে দর্পণ কর্তৃপক্ষ। এলাকার আরও কয়েকজন বলেন, তাদের ভয়ে অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।
অন্যদিকে, উত্তরার কয়েকজন প্রভাবশালী জামাত নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফয়সাল বিন রহমান জামাতের কোনো কার্যক্রম বা পদে জড়িত নন। তারা বলেন, “সে মোহাম্মদপুরে থাকে, উত্তরায় জামাতের কোনো কমিটি বা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নয়।” তবে দেশের অন্য কোনো এলাকায় সে জড়িত কিনা তা তারা জানেন না। জামাতের নাম ব্যবহার করে জমি দখল প্রসঙ্গে তারা বলেন, “এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। তার অন্যায়ের দায় জামাত নেবে না।”
ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গত দুই দিন ধরে দর্পণ গ্রুপের এমডি ফয়সাল বিন রহমান ও পরিচালক মোবিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে প্রতিবেদককে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন করে জানান, “তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক টাকা-পয়সার লেনদেন ছিল, জেদের বসে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি যেন একপেশে না হয়।”
তুরাগ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”