
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুই ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু এতে কোনো উন্নতি হবে না। কারণ, এক ভাগ থাকাকালীন যেমন আমলারা এটি পরিচালনা করতেন, দুই ভাগ হওয়ার পরও তারাই পরিচালনা করছেন। ফলে এনবিআর ভাগ হলেও বাড়তি কোনো সুফল পাওয়া সম্ভব নয়।
সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ইকোনমিক রিফর্ম সামিট ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবনের যে সব সমস্যা রয়েছে, তা আমলারা জানেন না। দেশের মানুষ কীভাবে আয় ও ব্যয় করে, ব্যবসার পেছনে কতটা পরিশ্রম দেয়, ব্যবসা পরিচালনায় কী ধরনের সমস্যা হয় এবং তার সমাধান কীভাবে করতে হয়—এসব বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। যারা ট্যাক্স নীতি প্রণয়ন করবেন, তাদের এসব বিষয়ে ধারণা থাকা জরুরি।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পথে প্রধান বাধা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, উল্লেখ করে বিএনপি নেতার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তিনি বলেন, আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো কার্যকর পদ্ধতি নেই। তাদের দায়িত্ব যদি কমিয়ে দেওয়া যায় এবং কাজগুলো বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তারা নিয়ন্ত্রিত হবে। আমরা বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করতে চাই, এবং বিএনপি ক্ষমতায় এলে সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য বেসরকারি খাতকেও প্রস্তুত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, রফতানির ক্ষেত্রে ইউডি (UD) ইস্যুর বিষয় আছে। আগে এটি করতো রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), তখন সময় লাগত বেশি এবং ঘুষের অভিযোগও ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ইউডি ইস্যুর কাজ ইপিবির কাছ থেকে নিয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এখনো সেই দায়িত্ব বিজিএমইএ-এর কাছেই রয়েছে। এতে যেমন ঘুষ দিতে হচ্ছে না, তেমনি সময়ও বাঁচছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে সহায়তা করতে বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করা হবে, যাতে আমলাতন্ত্র বিনিয়োগের পথে বাধা না হয়।
তিনি আরও বলেন, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সঙ্গে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করা হবে, তা না হলে বিনিয়োগের গতি বাড়ানো সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এখন লুটপাটের জায়গায় পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে কাকে পরিচালক করা হবে, কীভাবে ভাগ-বাটোয়ারা হবে—এই কাজগুলোই এখন করছে বিভাগটি। আগেরবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে এই বিভাগটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে আবার এটিকে সক্রিয় করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এই বিভাগ রাখা হবে না, যাতে সরকারি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণের নামে লুটপাট বন্ধ করা যায়।