• ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৈষম্যহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র গঠনের দৃঢ় অভিযাত্রার সূচনা ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’

ঢাকা
প্রকাশিত জুলাই ২৬, ২০২৫, ১৬:৪৬ অপরাহ্ণ
বৈষম্যহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র গঠনের দৃঢ় অভিযাত্রার সূচনা ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’
সংবাদটি শেয়ার করুন....

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বাংলাদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। এই অভ্যুত্থান বৈষম্যহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র গঠনের এক অদম্য অভিযাত্রার শুভ সূচনা করেছে।

শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের ওয়েসিস প্রাঙ্গণে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ উপলক্ষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়োজিত “জুলাই পুনর্জাগরণ–২০২৫” অনুষ্ঠানমালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’ শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “জুলাই আন্দোলন আমাদের রাষ্ট্র ও প্রশাসনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই অধ্যায় শুধুই প্রতিক্রিয়া বা বিরোধের নয়—এটি আশাবাদ, পরিবর্তনের ইচ্ছা এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক সাহসী ডাক। এই অভ্যুত্থান বৈষম্যহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ বাংলাদেশ গড়ার যাত্রা শুরু করেছে। ছাত্রসমাজ প্রথমে এই পথ দেখায়, পরে আপামর জনসাধারণ একত্রিত হয়ে এই আন্দোলনে অংশ নেয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কার্যকর পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা জনগণের উপর বিশ্বাস রাখতে শিখেছি। জনগণ কেবল সংখ্যা নয়, তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে থাকা উচিত। এই অর্জন আমাদের সকলের। আমরা যদি সেবাকে দায়িত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তবে বুঝব ‘জুলাই গণআন্দোলন’-এর মূল শিক্ষা আমরা আত্মস্থ করেছি। আমাদের এমন একটি রাষ্ট্র ও প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে যেখানে নাগরিকের কণ্ঠস্বর অগ্রাহ্য হবে না, সিদ্ধান্ত হবে তথ্যভিত্তিক ও জনস্বার্থে, এবং প্রশাসন হবে জনগণের প্রকৃত মিত্র।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত (উপদেষ্টা পদমর্যাদা) লুৎফে সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) আব্দুন নাসের খান। ‘ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে’ ৪ আগস্ট দৃষ্টি হারানো মো. সাব্বির আহমেদ অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে যে আত্মত্যাগ হয়েছে, তা নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, ও ব্যবসায় উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে।”

সচিব নাসরীন জাহান বলেন, “তরুণদের দমিয়ে রাখা যায় না। তাঁদের উচ্ছ্বাস ও প্রেরণাকে দমন করা অসম্ভব। যখন বাধা দেওয়া হয়, তখন তারা আরও দুর্বার হয়ে ওঠে। ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান’ তরুণদের এই দুর্বার শক্তিকে প্রমাণ করেছে। তিনি তরুণদের দেশ গঠনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—

  • বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান

  • প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসরাত হোসেন খান

  • বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. সাফিকুর রহমান

  • বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিচালন ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর আবু সাইদ মেহবুব খান

  • বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা

  • ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অপারেশনের মহাপরিচালক জুলফিকার আলী

  • আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ

  • টোয়াব সভাপতি মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান।

অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের ‘ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান’ স্মরণে আয়োজন করা হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও রক্তদান কর্মসূচি। উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন নিজ হাতে রক্তদান করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। এছাড়াও জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে আয়োজিত পর্যটন মেলায় ১০টি স্টল অংশ নেয়, যেগুলো উপদেষ্টা পরিদর্শন করেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারানো ১১ জন ‘জুলাই যোদ্ধার’ হাতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সৌজন্যে পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য (ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা) দুইটি করে টিকিটের কনফার্মেশন লেটার এবং স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে ওমরাহ হজের অন্যান্য ব্যয় বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করেন শেখ বশিরউদ্দীন।

এছাড়া, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিনজনের হাতে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকিট এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন তিনি।