• ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাদকের শহরে ভাসছে উত্তরা- তুরাগ : মাদক বন্ধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির প্রয়োজন

স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫, ০০:০৭ পূর্বাহ্ণ
মাদকের শহরে ভাসছে উত্তরা- তুরাগ : মাদক বন্ধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির প্রয়োজন
সংবাদটি শেয়ার করুন....

মোবাইল নেটওয়ার্ক ভিত্তিক ইয়াবার হোম ডেলিভারি
মাদকে সয়লাব উত্তরা বিভাগ
মাদকাসক্তদের ৫৮ শতাংশ ইয়াবা ও মাদকসেবী
ইয়াবাকে বলা হয় ‘আপার ড্রাগ’
বেচাকেনা চালায় তিন স্তরের সশস্ত্র সিন্ডিকেট
উত্তরা বিভাগের ছয় থানায় কমপক্ষে মাদকের দু’ শতাধিক হট স্পট
মাদক সম্রাট দুর্ধর্ষ অস্ত্রবাজ, ভূমিদস্যু চাঁদাবাজদের তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর তিন অক্ষরের নাম তার ইয়াবা। মরণনেশা ইয়াবাকে বলা হয় ‘আপার ড্রাগ’। মাদক সরবরাহকারী, খুচরা বিক্রেতা ও নেশাখোরদের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাদক “ইয়াবা ট্যাবলেট”। পেশাদার নেশায় আসক্তদের উক্তি- ইয়াবা খাবি খা; মারা যাবি যা। পুরানো দিনের মাদক যেমন- হেরোইন, প্যাথেডিন, আফিম, ফেন্সিডিল, চরশ, কেরো, বাংলা মদ, গাঁজাকে ও হার মানিয়ে শীর্ষ জায়গায় রয়েছে ইয়াবা। মাদকের শহরে ভাসছে রাজধানীর উত্তরা- তুরাগ। বিশেষ করে উত্তরা বিভাগের ছয় থানা এলাকা গুলো মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দা ও সর্বস্তরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রতিটি এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ভিত্তিক ইয়াবার হোম ডেলিভারি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বেচাকেনা চালায় তিন স্তরের সশস্ত্র সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। সমাজে বসবাসরত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৫৮ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত।
উত্তরা বিভাগের ছয় থানায় কমপক্ষে মাদকের দু’ শতাধিক হট স্পট রয়েছে। কারও কারও মতে: মাদকে সয়লাব উত্তরা বিভাগ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদক উদ্ধারের ব্যাপারে তৎপর থাকলেও আজো পর্যন্ত বন্ধ হয়নি মাদকদ্রব্য বেচাকেনা। বরং মাদকদ্রব্য ক্রয় বিক্রিয় ও সেবনকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সচেতন নাগরিক ও বিশেষজ্ঞ বলছে, এবিষয়ে বর্তমান সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত । এছাড়া মাদকদ্রব্য বন্ধে প্রশাসন ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কঠোর নজরদারির ও প্রয়োজন রয়েছে । খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশ্বস্থ তথ্য সূত্রের।

তথ্য অনুসন্ধান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কোথাও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে মাদকের মূল ব্যবসায়ী ও গডফাদাররা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা আত্নগোপন কিংবা বহাল তবিয়তে থাকে । কুখ্যাত মাদক সম্রাট, দুর্ধর্ষ অস্ত্রবাজ, সন্রাসী, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজদের নাম ও আখড়াগুলোর তালিকা পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা , মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদকাসক্তদের ৫৮ শতাংশ ইয়াবাসেবী। ২৮ শতাংশ আসক্ত ফেনসিডিল এবং হেরোইনে। গবেষকরা বলছেন, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে ইয়াবা জনপ্রিয় হতে শুরু করে ২০০০ সালের পর থেকে যখন টেকনাফ বর্ডার দিয়ে মিয়ানমার থেকে এই ট্যাবলেট দেশে আসতে শুরু করে। তারপর এটি খুব দ্রুতই দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। তার আগে নব্বই এর দশকে জনপ্রিয় ড্রাগ ছিল হেরোইন।

রাজধানীতে মুক্তি নামের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের বেডের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। চিকিৎসার জন্যে তাদের কাছে যতো রোগী আসেন তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই ইয়াবাসেবী এবং মাদকাসক্ত ।

গবেষকরা বলছেন, মাদকাসক্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। তবে তাদের প্রকৃত সংখ্যা কতো সেটা বলা কঠিন। ইয়াবা হচ্ছে এমফিটামিন জাতীয় ড্রাগ- মেথাএমফিটামিন।
হেরোইনের মতো করেই খেতে হয় ইয়াবা। ইয়াবাকে বলা হয় ‘আপার ড্রাগ’। চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে; কারণ- ইয়াবা গ্রহণ করলে শুরুতে সে শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। হেরোইন ও ফেনসিডিল হচ্ছে ইয়াবার বিপরীতধর্মী ড্রাগ। এগুলো নারকোটিক এনালজেসিক। অর্থাৎ ব্যথানাশক ওষুধ। এটিকে বলা হয় ‘ডাউনার ড্রাগ’ কারণ এটি খেলে সে ঝিম মেরে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের কয়েক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ প্রতিবেদককে বলেন, কোডিন ফসফেট খেলে মানুষ স্বপ্নের রাজ্যে বিচরণ করে। নিজেকে রাজা বাদশাহ ভাবতেও অসুবিধা হয় না। দেশে যতো ধরনের মাদক আছে- সেগুলোর সবই মানুষের ‘মস্তিষ্কের পুরষ্কারতন্ত্রের’ মাধ্যমে কাজ করে। ইয়াবায় শরীর চাঙ্গা হয়; রাতের পর রাত জেগে থাকা যায়। যৌন উদ্দীপনা বেড়ে যায়, হেরোইন ও ফেনসিডিল খেলে শরীর ঝিম মেরে থাকে। তখন বিচরণ করে কল্পনার রাজ্যে।

হাসপাতালের চিকিসৎকরা আরও জানান, ইয়াবা খেয়ে শিক্ষার্থীরা রাতে বেশিক্ষণ জেগে থাকলেও কোন লাভ হয় না। কারণ- পড়ালেখায় তার মনোযোগ থাকে না। এটা খেলে তার খিদে কমে যায়। তখন সে কম খায়। তারপর ধীরে ধীরে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক এ প্রতিবেদককে জানান, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, লিভার, কিডনি থেকে শুরু করে শরীরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ইয়াবা খেলে উচ্চ রক্তচাপ হয়। লিভার সিরোসিস থেকে সেটা লিভার ক্যান্সারেও পরিণত হতে পারে।

মাদকাসক্ত কেন্দ্র ও দেশের নামি-দামি এবং অভিজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, অতিরিক্ত মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে যৌন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ফুসফুসে পানি জমে,কিডনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। লিভার সিরোসিস থেকে ক্যন্সারও হতে পারে। মেজাজ চড়ে যায়, রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, রক্তচাপ বেড়ে যায়, সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায় এবং মানসিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়।

উত্তরা, তুরাগ, উত্তরখান, দক্ষিণখানের স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাদক বেচাকেনা হয়। এসব এলাকা গুলোতে মাসে শত কোটি টাকার মাদক বিক্রি হয়ে থাকে । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অপরাধ করে পালিয়ে আসা অস্ত্রধারী, দাগি অপরাধী, পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী, খুচরা ব্যবসায়ী, সুন্দরী স্মার্ট নারী, বয়স্ক নারী, তরুণী ও অনেক গৃহবধূ বর্তমানে এ পেশার সাথে জড়িত আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানকালে মাদকের গডফাদার ও রাঘববোয়ালরা থাকে আত্নগোপনে কিংবা ধরা ছোয়ার বাহিরে।

স্থানীয় এলাকা ভিত্তিক বাসিন্দাদের মতে, স্থায়ী সমাধানের জন্য দরকার নিজ নিজ এলাকার বস্তি উচ্ছেদ ও তাদেরকে পুনর্বাসন, মাদক সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, মাদক স্পট শনাক্তকরণ, ডেলিভারি রুটে জিরোট্রলারেন্স, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট বৃদ্ধি করণ, আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণ এবং দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান। এগুলো ছাড়া মাদকের হোলসেল মার্কেট বদলানো সম্ভব নয়।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকে মাদকবিরোধী তৎপরতা ঢিলে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম থানার আওতাধীন নামি-দামি আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউজ, কিছু বস্তি এলাকা, আবাসিক উত্তরা মডেল টাউন, একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও অলিগলিতে দিনের বেলায়ই গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, দেশি-বিদেশি মদ, প্যাথেডিন, আফিম বিক্রি হচ্ছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ভিত্তিক ডেলিভারি, মোটরসাইকেল- রিকশায় ড্রপ, রেললাইন বা খোলা মাঠে পিকআপ ভ্যানে সব মিলিয়ে লেনদেন দ্রুত ও গোপন রাখা হচ্ছে।
এই বেচাকেনা চালায় তিন স্তরের সশস্ত্র সিন্ডিকেট। শীর্ষে পাইকারি সরবরাহকারী, মাঝখানে খুচরা বিক্রেতা ও সবশেষ দালাল। প্রত্যেক স্তরে দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে। ‘স্পটার’ বা ‘ওয়াচার’ পথে ঘাটে কঠোর নজর রাখে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সমস্যা কিংবা অপরিচিত কেউ আস্তানায় ঢুকলেই সংকেত পাঠায়। ফলে গণমাধ্যমকর্মীদের মোবাইল কিংবা ক্যামেরা মাথার ওপরে তুললেই হামলার ঝুঁকি তৈরি হয়।
উত্তরা বিভাগের ছয় থানায় কমপক্ষে মাদকের দু’ শতাধিক হট স্পট রয়েছে। সারা দেশ থেকে মাদকের চালান টঙ্গী রেলস্টেশন, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, তেজগাঁও ও কমলাপুর রেলস্টেশনে নামে। সড়কপথে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী কালিগজ্ঞ সড়ক, ঢাকা আশুলিয়া – মিরপুর বেরিবাধ সড়ক, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে গাজীপুরের টঙ্গী, উত্তরা, তুরাগ, যাত্রাবাড়ি ও গাবতলি হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। এসব এলাকায় ইয়াবা, প্যাথেডিন, হেরোইন, গাঁজার বড় পাইকারি চক্র সক্রিয়, যেখান থেকে সারা দেশে সরবরাহ হয়। কোন কোন সময় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ থেকে ঢাকায় আগত বিভিন্ন নামি-দামি যাত্রীবাহী বাস ও প্রাইভেটকারে করে বড় বড় ইয়াবা ও আইচ এর চালায় ঢাকায় নিয়ে আসে মাদক কারবারিরা। অনেক সময় মাদকের গডফাদার ও ডিয়াররা টাকা দিয়ে যুবক ও মাদক সরবরাহকারীদের ভাড়া করে কিংবা কন্টাক্ট করে পেটের ভেরত ইয়ারা ঢুকিয়ে বিমানযুগে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। অনেকের মাদকদ্রব্য সরবরাহের ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে। মাঝেমধ্যে ইয়াবা ও হেরোইন ও কোকেন এর চালান ঢাকা বিমানবন্দরে ধরা পড়েছে। বিদেশী নাগরিক, রোহিঙ্গা যুবক- যুবতীসহ অনেকেই মাদকসহ ধরা পড়েছে।

মাদকের ওপর তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুন্দরী রমনী, তরুণী ও বৃদ্ধা বয়সি মহিলাদের ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা । এ ব্যবসায় অনেকে মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে ইতোমধ্যেই বেশ পরিচিতি অর্জন করেছে। বিভিন্ন মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করে মাদক সম্রাজ্ঞীরা। এসব সম্রাজ্ঞীর একেক জনের বাহিনীতে রয়েছে। দাগি আসামিরা মাদক বেচাকেনার আলাদা আলাদা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। মাদক বেচাকেনা, চোরাচালান এবং হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এবং একাধিক মামলা থাকলেও তারা মাদক বেচাকেনার আখড়া বসিয়ে প্রকাশ্যে ব্যবসা করছে। মাদক সম্রাট দুর্ধর্ষ এ অস্ত্রবাজদের নাম ও আখড়াগুলোর তালিকা রয়েছে পুলিশ, গোয়েন্দা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে। তবে মাদকের মূল ব্যবসায়ী ও গডফাদাররা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে, বহাল তবিয়তে।

স্থানীয় গনমানুষের অভিযোগ, উত্তরায় বেঙ্গের ছাতার মতো আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউজ, মদের বার, জুয়া খেলার ক্লাব ও অসংখ্য ফ্ল্যাট বাসায় অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়। অল্প কয়েক দিন ব্যবসা বন্ধ থাকলে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ব্যবসা আবার শুরু হয়। স্থানীয়দের মতে, অভিযানের আগে খবর ফাঁস হওয়া, মূলহোতাদের ধরা না পড়া, গুপ্ত রুটে পাল্টা চলাচল, আইনি প্রক্রিয়ায় ঢিলেমি—সবই এই পুনরুজ্জীবনের কারণ।
‘স্ট্যাশ পয়েন্ট’ হিসেবে পানির ট্যাঙ্ক, পরিত্যক্ত টয়লেট, নির্মাণাধীন ছাদ, গোপন তাক, গ্যাস সিলিন্ডার গুদাম, এমনকি ড্রেন কভারও ব্যবহৃত হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট সূত্র, এলাকাবাসী ও স্থানীয়দের মতে, মাদক ব্যবসার অর্থপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে প্রভাবশালী মহল। তুরাগের চন্ডাল ভোগ, ডিয়াবাড়ী, তারারটেক, নয়ানগর, কামারপাড়া, ফুলবাড়ীয়া, বাউনিয়া ও আহালিয়াসহ সাবেক হরিরামপুর ইউনিয়নের ছোট বড় ৩৩টি গ্রামের স্হানীয় কতিপয় ব্যক্তি দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। অল্প দিনেই তারা কেটিপতি ও লাখোপতি বনে গেছেন। বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ব্যালেন্স ও গাড়ি বাড়ির মালিক ও হয়েছেন। উচ্চসুদের নগদ সরবরাহ দিয়ে বাজার সচল রাখা হয়, যাতে অভিযানের পর দ্রুত ব্যবসা ফের চালু করা যায়। তাদেরও গডফাদার ও শেল্টার দাতা রয়েছে।

গত (১৪ আগস্ট ২০২৫) ইং ভোরে বনানীর ‘খ্রি সিক্সটি ওরফে ‘৩৬০ ডিগি সিসা লাউঞ্জে’ আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে ইন্টারনেট ব্যবসায়ী রাহাত হোসেন রাব্বি (৩১) খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেফতারকৃতরা হলো আ. মালেক মুন্না, মাকসুদুর রহমান হামজা, আমীর হোসেন (২২), ফজলে রাব্বি (২৪), সাব্বির আহমেদ সুমন (৩০) এবং আরাফাত ইসলাম ফাহিমকে (২৭)।
এ খুনের ঘটনায় নিহত রাহাতের বাবা রবিউল আউয়াল বাদী হয়ে বনানী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং–১৭, তারিখ–১৫/০৮/২০২৫; ধারা–৩৪৪/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৫০৬/৩০২/১১৪/৩৪ পেনাল কোড।

এদিকে গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) ইং তুরাগের তারারটেক এলাকায় এক মাদক বিরোধী সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব হাজী মোস্তফাজ্জামান মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, আজকের পর থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ৫৩ নং ওয়ার্ড তারারটেক এলাকায় কোন ধরনের মাদক বেঁচাকেনা চলবে না। মাদকের বিরুদ্ধে আমি জিরোট্রলারেন্স ঘোষণা করছি।

হাজী মোস্তফা জ্জামান বলেন, মাদক ব্যবসা ও মাদকাসক্তদের নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজী সন্ত্রাসী, দখলবাজি, ছিনতাই, ও মাদক বিক্রিসহ কোন অসামাজিক কর্মকান্ড তারারটেক এলাকায় চলবে না। এটি নিষিদ্ধ করা হলো। আজকের পর কেউ যদি মাদক বিক্রি করে তাহলে তাদের হাত পায় ভেঙে পুলিশে এবং সেনাবাহিনীর নিকট সমর্থন করা হবে ।

“মাদক ও নেশা জাতীয় অপকর্ম থেকে যুব সমাজকে রক্ষার জন্য তারারটেক এলাকাবাসি ও মুসল্লিদের
উদ্যোগে এ বিশাল প্রতিবাদ সভাও মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। আলোচনা ও প্রতিবাদ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, তুরাগ থানা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ হারুন -রশীদ খোকা, বিএনপি নেতা মোঃ আলী আহমেদ, স্হানীয় বিএনপি নেতা মো: রিপন মিয়া, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তুরাগ মধ্য থানার আমীর গাজী মনির হোসেন, তুরাগ মধ্য থানা মজলিসের শূরা ও কর্মপরিশোধ সদস্য এবং ঢাকা-১৮ আসনের ৫৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট সুরুজ্জামান প্রমুখ।

তুরাগসহ উত্তরা বিভাগের বিভিন্ন এলাকাবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে তুরাগের ৫৩ নং ওয়ার্ড তারারটেক, ডিয়াবাড়ী, নলভোগ, চন্ডাল ভোগ, রানাভোলা, ফুলবাড়িয়া, নয়ানগর, শুক্রভাঙা এবং ৫৪ নং ওয়ার্ড কামারপাড়া, রাজাবাড়ী, ধউর, ৫২ নং ওয়ার্ড পাকুরিয়া, খানটেক, যাত্রাবাড়ি, আহালিয়া, বাউনিয়া, বটতলা, দলিপাড়া, দলিপাড়া, বাদালদী, ষোলহাটী, উত্তরখানের মাজার এলাকা, মৌনারটেক, চামুরখান, কলাবাগান, দক্ষিণ খানের আশকোনা, ফায়দাবাদ, কোর্ট বাড়ি, মৌশাইর, মোল্লা বাড়ি, চেয়ারম্যান পাড়া, আজমপুর কাঁচাবাজারসহ উত্তরা পশ্চিম থানার ৩, ৫, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ নং সেক্টর, পূর্ব থানার, ৪, ৬ নং সেক্টর, আব্দুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেট সংলগ্ন রেললাইন বস্তি ও অবৈধ দোকানপাট, ১২ নং সেক্টর খালপাড়, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের পাশে অবৈধ বস্তি, রিকশার গ্যারেজ, কাঁচা বাজার, ভাঙ্গারি ও টংদোকান, রেন্ট এ কার, পিকাব স্ট্যান, ফার্নিচার মার্কেট, তুরাগের বিআরটিএ অফিস এর সামনে গড়ে উঠা অবৈধ দোকানপাট, খালপাড় অবৈধ বালুর ট্রাক ষ্ট্যান্ড, ১৫ নং সেক্টর চণ্ডাল ভোগ নতুন বাজার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস এর সামনে গাড়ির চাকা ও চা পানের দোকান, উত্তরা কার হাঁটের দোকান, ১৬, ১৭ ও ১৮ নং সেক্টরের বিভিন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসা, মাদকাসক্তদের আড্ডা ও অসামাজিক কার্যকলাপ অনেকাংশে বেড়েছে। এতে করে আগামী প্রজন্মের তরুন মেধাবী শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী, যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব খুব শিগগিরই বন্ধ করা উচিৎ বলে সচেতন নাগরিক ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

ডিএমপির তুরাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মনিরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, তুরাগের তারারটেক গ্রামে গত শুক্রবার এক মাদক বিরোধী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় তিনি তারারটেক এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন। মাদক কারবারি যে দলেরই হউক না কেন! এব্যাপারে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। দরকার হলে মাদকের বিরুদ্ধে এলাকা ভিত্তিক চিরুনি অভিযান চালানো হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরা বিভাগের পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন,
মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরোট্রলারেন্স ও জিহাদ ঘোষণা করেছি। প্রতিদিন আমাদের অভিযান চলমান আছে। গুরুত্বপূর্ণ স্হান গুলোতে পুলিশী চেকপোস্ট বসানো হয়। চলছে কঠোর নজরদারিও। ইতিপূর্বে মাদকদ্রব্যসহ অসংখ্য মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

এব্যাপারে অবৈধ মাদক ব্যবসা বন্ধ, প্রতিকার ও তরুণ প্রজন্মের মেধাবী শিক্ষার্থী ও যুব সমাজকে ধবংসের হাত থেকে বাঁচাতে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, পুলিশের আইজিপি, ডিএমপির পুলিশ কমিশনার, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ঢাকা -১৮ আসনের সর্বস্তরের জনগন।