• ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটে ভেঙে ফেলা হবে ২৩টি ভবন

সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশিত নভেম্বর ২৩, ২০২৫, ১২:৪৯ অপরাহ্ণ
সিলেটে ভেঙে ফেলা হবে ২৩টি ভবন

সিলেট শহর

সংবাদটি শেয়ার করুন....

ভূমিকম্পে বারবার কেঁপে উঠছে সিলেট। কখনো ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি ফল্ট, কখনো সিলেট বিভাগের ভেতর উৎপত্তিস্থল, আবার কখনো ঢাকার কেন্দ্রবিন্দু—এভাবে একের পর এক ভূকম্পনে আতঙ্কে দিন কাটছে সিলেট নগরবাসীর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা স্থানীয় ফল্টগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠায় ভূমিকম্পের হার দ্রুত বাড়ছে। ভূতাত্ত্বিকভাবে ‘ডেঞ্জার জোন’-এ থাকা সিলেটে বড় ধরনের দুর্যোগের ঝুঁকি ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এই অবস্থায় নগরীতে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ভবনগুলো বড় আতঙ্ক তৈরি করেছে। বড় ভূমিকম্প হলে এসব ভবন ধসে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছেন নগরবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। এতদিন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো উদাসীন থাকলেও এবার নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানিয়েছেন, সিলেট নগরীর ২৩টি বিপজ্জনক ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো খুব শীঘ্রই ভেঙে ফেলা হবে। সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ভবন এর মধ্যে রয়েছে এবং আগামী সপ্তাহ থেকেই অপসারণ শুরু হবে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুসারে, নগরীর অধিকাংশ পুরনো ভবনের নকশায় ভূমিকম্প প্রতিরোধী ব্যবস্থা নেই, ফলে তীব্র কম্পনে এগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক মার্কেট ও আবাসিক ভবন। গত ২৪ ঘণ্টায় তিন দফা ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে—শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে এক সেকেন্ড ব্যবধানে ৩.৭ ও ৪.৩ মাত্রার দুইটি এবং সকালে ৩.৩ মাত্রার আরেকটি ভূকম্পন হয়।

আগের দিন ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে দুই শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু ও কয়েকশ মানুষ আহত হয়।জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম বলেন, চিহ্নিত ভবনগুলোতে এখনো কেউ কেউ বসবাস করছেন বা কাজ করছেন, দ্রুত অপসারণ না করলে বড় দুর্ঘটনা হতে পারে। নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন একাধিক ওয়ার্কশপ করলেও উদ্ধারকাজে প্রধান সমস্যা সংকীর্ণ রাস্তা; ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে না পারলে রেসকিউ ব্যাহত হবে। ২০১৯ সালে সিসিক নগরীর ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করেছিল—এর মধ্যে ৬টি সংস্কার করা হলেও ১৮টি এখনো বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মধুবন মার্কেট, সুরমা মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, রাজা ম্যানশন, নবপুষ্প-২৬/এ, আজমীর হোটেলসহ আরও কয়েকটি ভবন। পূর্বের তালিকার কিছু ভবন অপসারণ বা সংস্কার করা হয়েছে—যেমন কালেক্টরেট ভবন-৩, বন্দরবাজার সিটি সুপার মার্কেটের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ, কিবরিয়া লজ, বনকলাপাড়ার নূরানী-১৪, ধোপাদিঘীর পাড়ের পৌর শপিং সেন্টার ইত্যাদি। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বড় ফাটল, নড়বড়ে সিঁড়ি, হেলে পড়া দেয়াল রয়েছে, যা বাসিন্দাদের দিনরাত আতঙ্কে রাখছে। ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সিলেট বিভাগে অনুভূত একাধিক ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেট ও মেঘালয় হওয়ায় ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।