• ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র রপ্তানি খাত অনিশ্চয়তার কবলে: ব্যবসায়ী নেতারা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ২০:২০ অপরাহ্ণ
দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র রপ্তানি খাত অনিশ্চয়তার কবলে: ব্যবসায়ী নেতারা
সংবাদটি শেয়ার করুন....

বিজিএমইএ সভাপতি কে মন্ত্রী হিসেবে পদমর্যাদা দিতে হবে ব্যবসায়ীদের দাবী। দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র রপ্তানি খাত অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতাদের আস্থার সংকট এবং বিভ্রান্তিকর সরকারি বার্তার কারণে বড় ক্রেতারা কার্যাদেশ দিতে সরে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ক্রেতারা কার্যাদেশ দেবে না। আজ রাজধানীর উত্তরা ক্লাবে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় পোশাক খাতে বিদ্যমান সংকট ও বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়। বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, সরকার আমাদেরকে এলডিসি গ্রাজুয়েশন চাপিয়ে দিতে চাইছে, অথচ আমরা এখনো প্রস্তুত নই। বাংলাদেশের স্নাতকোত্তর পর্বে টেকসই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সহযোগিতামূলক, পূর্বাভাসযোগ্য ও স্থিতিশীল নীতিগত পরিবেশ প্রয়োজন। এখন সরকারকে একটি ভালো নির্বাচন দিতে হবে এবং আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা উন্নত করতে হবে।

আগামী নির্বাচনে শিল্প খাতে ১০ জন মালিককে রাখা জরুরি এবং নতুন সরকারে ব্যবসায়ীদের নীতিনির্ধারণী জায়গায় রাখতে হবে। বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ভারতের শিল্প মালিকরা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তা আমাদের শিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের হাজার কোটি টাকা ব্যাংক রক্ষা করতে দেওয়া হলেও ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, অথচ ব্যবসায়ীরা কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না, তার ওপর করপোরেট ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। বিজিবিএ সভাপতি মোহাম্মদ পাভেল বলেন, পোশাক খাতের সংকটের শেষ নেই—নিরাপত্তা সংকট, নীতি সংকট সব মিলিয়ে সমন্বিত রোডম্যাপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, বায়াররা বাংলাদেশে অর্ডার দিতে নিরাপত্তা পাচ্ছে না। বিজিএমইএ সহ সভাপতি মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম বন্দরের দুরবস্থা এবং বিমানবন্দরের আগুনের কারণে খাতটির ব্যাপক ক্ষতির কথা তুলে ধরেন। বিকেএমইএ পরিচালক খেলায়েত হোসেন সরকারের নীতিগত সহায়তা দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন স্পারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম। তিনি বলেন, “গত চার মাস ধরে অর্ডার কমছে, সরকারের কোনো নীতিগত সহায়তা নেই। বর্তমান পরিস্থিতি কোভিডের চেয়েও ভয়াবহ।

অনেক কারখানা ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ক্লাসিফায়েড হয়ে যাচ্ছে।” তিনি ২০ জন শ্রমিক দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, এটি বাস্তবায়িত হলে বড় বিপর্যয় ঘটবে। তিনি বলেন, “যে দেশে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুড়ে যায় সেখানে বায়াররা নিরাপদ মনে করবে না। দৃশ্যমান ক্ষতির চেয়ে অদৃশ্য ক্ষতি অনেক ভয়ানক।” তিনি আরও বলেন, “ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে, ব্যাংক বন্ধ হচ্ছে—সরকার আমাদের নির্বাচন দিয়ে মুক্তি দিক, আমরা শান্তিতে ব্যবসা করতে চাই।” তিনি সকল ব্যবসায়ীর পক্ষে দাবি করেন যে আগামীতে বিজিএমইএ সভাপতির মন্ত্রী পদমর্যাদা দিতে হবে। বিজিএপিএমই সভাপতি আল শাহরিয়ার আহমেদ এয়ারপোর্টের আগুনে এক্সেসরিজ খাতে বড় ক্ষতির কথা তুলে ধরে বলেন, আগামী নির্বাচনে পোশাক খাতের সংসদ সদস্য দরকার। সম্মেলনে আরও জানানো হয়, নন-কমপ্লায়েন্সের কারণে গত এক বছরে ২৫৮টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং এক লাখের বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়েছে।

শ্রমিক সংগঠন গঠনের ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা ২০-এ নামিয়ে আনা হলে শিল্প অস্থিতিশীল হতে পারে বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা জানান। চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার বিপরীতে বাড়তি মাশুল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেবে বলেও মন্তব্য করা হয়। এছাড়া আর্থিক খাতের নাজুক অবস্থা থেকে উত্তরণে বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও প্রশাসনিক সংস্কারের দাবি জানানো হয়। বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বর্তমান সরকারকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, কারণ নির্বাচিত সরকার থাকলে বায়াররাও অর্ডার বাড়াবে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, ফারুক হাসান, রফিকুল ইসলাম, বিজিএমইএ মেম্বার কফিল উদ্দিন, চৈতী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম, উত্তরা ক্লাবের সভাপতি ফয়সাল তাহেরসহ অনেকে। সভার সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়িক ক্ষতি থেকে উত্তরণে সরকারের আন্তরিকতার বিকল্প নেই—নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ সম্ভব নয়। মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএ, বিজিবিএ, বিকেএমইএসহ রপ্তানিমুখী বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন এবং সকলেই শিল্পখাতে সংকট নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।