• ২রা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণখান ও উত্তরখানে মাদকের ছড়াছড়ি

কিশোর গ্যাংগের উৎপাতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত

মনির হোসেন জীবন, বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ২০:১১ অপরাহ্ণ
দক্ষিণখান ও উত্তরখানে মাদকের ছড়াছড়ি
সংবাদটি শেয়ার করুন....

রাজধানীর সর্ব উত্তরের জনবহুল এলাকার নাম দক্ষিণখান ও উত্তরখান। বর্তমানে দু’টি থানা এলাকাকে কেন্দ্র করে মাদকের অবাধ ছড়াছড়ি চলছে। কিশোর গ্যাংগের উৎপাতের ফলে এলাকাবাসীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই আবার ভয়ে রাত কাটায়! কিশোর গ্যাং, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদকদ্রব্য বেচাকেনা দেখাচ্ছে চলছে। যেন দেখার কেউ নেই। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয় একাধিক বিশ্বস্ত তথ্য সূত্রের।

সূত্র বলছে, দক্ষিণখান ও উত্তরখান এলাকা দু’টির মোড়ে মোড়ে কিশোর গ্যাংদের সদস্যরা রাত দিন আড্ডা জমায়। এ সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা গাঁজা, ইয়াবা ট্যাবলেট থেকে শুরু করে ট্যাপেনডেনাল পর্যন্ত মরননেশা সেবন করে থাকেন। নেশার টাকা সংগ্রহ করতে তারা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, ময়লা, ডিশ, ইন্টারনেট সহ রাস্তাঘাট এর ফুটপাতে চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছে। নতুন কোন ভবন নির্মাণ করতে গেলেই তাদেরকে চাঁদা দিতে হবে এমন হুমকি ও ধামকি অহরহ ঘটছে। অনেক নিরীহ মানুষ ভয়ে অপরাধীদেরকে চাঁদার টাকা দিচেছ। অনেক সময় টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘাত ও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। মাঝেমধ্যে দু’ গ্রুপের সাথে সংঘর্ষ চলাকালে তারা দেশীয় অস্ত্রও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। উঠতি বয়সী কিশোর গ্যাংরা স্কুল কলেজের মেয়েদের দেখলেই বাজে ইঙ্গিত করেন। অনেকেই আবার প্রকাশ্যেই স্কুলের আশেপাশে এবং রাস্তাঘাটে ইভটিজিং করে বেড়ায়। তাদের কৃতকর্মের প্রতিবাদ করতে গেলেই তারা নিজেদেরকে রাজনৈতিক দলের পরিচয় দেয়। তাদেরকে প্রায় সময় বলতে শোনা যায়; আমি অমুক ভাইয়ের লোক; আমি, তমুক ভাইয়ের লোক। ইতিমধ্যেই এ চক্রের অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে দক্ষিণখান ও উত্তরখান থানায় একাধিক মামলা, জিডি ও লিখিত অভিযোগ রয়েছে। নেশায় আসক্ত এ যুবকরা রাতের অন্ধকারে এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজীর মত জঘন্য কাজে লিপ্ত রয়েছে ।

তথ্য অনুসন্ধ্যান ও এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কিছু ভাঙারি দোকানদারের সাথে এদের দহরমমহরম ও সখ্যতা রয়েছে। গেল ২০২৫ সালের ৫ ই আগস্টে যে বিপ্লব হয়েছিল, সেই বিপ্লবের পর থেকে থানা পুলিশের ভূমিকা অনেকটাই প্রায় নিষ্ক্রিয়। থানায় প্রবেশ করলেই দেখা যায় নতুন নতুন মুখের কিছু লোক। মাদকের বড় মাপের ডিলার ও গডফাদাররা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয় মাদকের খুচরা বিক্রেতা ও সেবনকারী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরখান থানাটি তুরাগ নদী ঘেঁষা। বিশেষ করে উত্তরখান মাজার, মাষ্টারপাড়া, কলা বাগান, তেরমুখ, কাঁচ কুড়া, মৈনারটেক, দক্ষিণখানের আশকোনা, দক্ষিণখান বাজার, পন্ডিত পাড়া, চেয়ারম্যান বাড়ী, মোল্লা বাড়ি, মোল্লারটেক, মাটির মসজিদ, কসাইবাড়ি, গাওয়াইর, আশকোনা বাজার, ফায়দাবাদ, চরিরটেক, ট্রান্সমিটার, আজমপুর, আজমপুর রেললাইন, চৌতি গার্মেন্টস এর আশপাশ এলাকা, কসাইবাড়ি, রেললাইন, কোটবাড়ি, মৈশাইর, বিমানবন্দর রেললাইন, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী ব্রিজ রেললাইন এলাকা হল ছিনতাইকারী, কিশোর গ্যাং ও মাদকের হটস্পট। অনেক সময় ইয়াবা ট্যাবলেট দামি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার যুগে হোম ডেলিভারি দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে বলেন, বিগত ১৬ বছরে এদেরকে এলাকায় কিংবা থানায় দেখতে পাইনি। মাদক, ছিনতাই এবং কিশোর গ্যাং নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দক্ষিণখান জোনের কর্মকর্তারা বলছে, মাদক, কিশোর গ্যাং ও ছিনতাই প্রতিরোধে আমরা বিশেষ টিম গঠন করেছি। মাঝেমধ্যে আমরা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে থাকি। সম্প্রতি মাদকসহ অনেকেই আটক করা হয়েছে।