মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি, বরিশাল।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বরিশাল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, এলজিইডির পল্লী সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বরিশাল জেলার জনপথ। কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশের দক্ষিণ জনপদের জেলা বরিশাল অসংখ্য নদ-নদী ও খাল বিল দ্বারা বিভক্ত জেলার সমতল ভূমি। সরকারি গেজেট অনুযায়ী জেলার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ।
জেলার প্রান্তিক জনপদের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন ও নতুন ক্ষুদ্র কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে গত প্রায় ৪০ বছর ধরে পল্লী সড়ক যোগাযোগসহ বহুমাত্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বরিশাল জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
সরকারি গেজেট অনুযায়ী জেলার মোট সড়ক ১১,৮৩৬ কিলোমিটার। যার মধ্যে কাঁচা সড়ক ৭,৮৭৭ কিলোমিটার ও পাকা সড়ক ৩,৯৬০ কিলোমিটার। পাকা সড়কের মধ্যে উপজেলা সড়ক ৭৭৩ কিলোমিটার, ইউনিয়ন সড়ক ৭৫০ কিলোমিটার ও গ্রামীণ সড়ক ২,৪৩৫ কিলোমিটার, সড়ক প্রশস্ত করুন ২৮ কিলোমিটার। উক্ত সড়ক সমূহের নির্মিত ব্রিজ ও কালভার্টের মোট দৈর্ঘ্য ৭৬,৩৮১ মিটার। জেলের রক্ষণাবেক্ষণ পাকা সড়ক ৪৩৭ কিলোমিটার।
তাছাড়া এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ৬৯টি হাট বাজার নির্মাণ করা হয়েছে। টেকসই সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বরিশাল জেলায় এলজিইডিকে ২৪টি রোড রোলার ও ৫১টি মোটরসাইকেল প্রদান করা হয়েছে।
নিম্ন আয়ের মানুষ সহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সন্তানদের জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থায়নে এলজিইডি প্রাথমিক শিক্ষা অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা ইউনিটের আওতায় বরিশাল জেলায় ৯২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে।
জেলার প্রান্তিক জনপদে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খাল খনন করা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে পুকুর খাল খনন প্রকল্পের আওতায় ৬৫টি সরকারি খালপুকুর ও ১৩৪.২৫ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। জেলায় ১০টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ও ১০টি উপজেলা এলজিইডির মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৩২৫ জন জনবল রয়েছে। যার মধ্যে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সহ ১৯ জন (জিওবি), ৪০ জন মাস্টার রোল ও ২৬ জন আউটসোর্সিং বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। উল্লেখিত জনবলের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী সহ জেলা এলজিইডির কার্যালয়ে ৮৫ জন কর্মরত। যাদের মধ্যে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী ১ জন, সরকারি প্রকৌশলী ২ জন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ৩ জন, হিসাব রক্ষক ১ জন, হিসাব সহকারী ১ জন, কার্য-সহকারী ১ জন, গাড়িচালক ও অন্যান্য কর্মচারী ৭৪ জন। অবশিষ্ট ২৪০ জন জনবল ১০টি উপজেলা এলজিইডি দপ্তরে কর্মরত আছেন।
২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম বরিশাল জেলা এলজিইডির ২৩তম নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর থেকে তিনি দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে জেলার প্রান্তিক জনপদে জলবায়ু সহিষ্ণু টেকসই সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমের নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।
এলজিইডির পল্লী সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বরিশাল জেলার প্রান্তিক জনপথ। গতিশীল হয়েছে জেলার মিশ্র কৃষি অর্থনীতি। জেলা এলজিইডি সূত্র জানায়, কাজের মান কাঙ্খিত পর্যায়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের সময় নির্বাহী প্রকৌশলী নিজে উপস্থিত থেকে বাস্তবায়িত কার্যক্রমের তদারকি ও কারিগরি পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। যার ফলে মাঠ পর্যায়ে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম যেমন গতিশীল হয়েছে, তেমনি কাজের গুণগত মানও সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।

এলজিইডির পল্লী সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে বরিশাল জেলার সাথে একাধিক জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের সংযোগ তৈরি হওয়ায় আন্তঃজেলা সড়ক যোগাযোগে মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে জেলার প্রান্তিক কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি ও অকৃষি পণ্য ন্যায্যমূল্যে বাজারজাত করার জন্য দ্রুত ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে সুবিধাজনক বাজার খুঁজে নিতে পারছেন।
তাছাড়া ব্যাটারি চালিত বহুমুখী ক্ষুদ্র পরিবহন সেবার সাথে যুক্ত স্থানীয় শ্রমজীবী বেকার যুবকরা চালক হিসেবে জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে যোগাযোগ সেবা প্রদান করে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করছেন।
বরিশাল এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেক খান বলেন, বরিশাল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আমরা জেলার সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছি। নির্বাহী প্রকৌশলীর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এবং প্রতিটি উপজেলায় সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক কাজের অগ্রগতি ও গুণগত মান নিশ্চিত করা হচ্ছে।
জেলার প্রান্তিক সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বরিশাল জেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি এই জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর মাঠ পর্যায়ে উপস্থিত থেকে পল্লী সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে নদী-খালের বহু-মাত্রিকতার ফলে অনেক সময় প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করেই অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। বিষয়টি আমি দারুণভাবে উপভোগ করছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, যোগদানের পর সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীগণ এবং বর্তমান সুযোগ্য প্রদান প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ার হোসেনের সার্বিক নির্দেশনা ও সদর দপ্তর, বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শ ও নির্দেশনা পাচ্ছি। যা প্রান্তিক জনপদের পল্লী সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
তাছাড়া বরিশাল জেলা এলজিইডিতে কর্মরত আমার সহকর্মীরাও তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন। জেলা এলজিইডির বহুমাত্রিক পল্লী সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকেও আন্তরিকভাবে সহযোগিতা পাচ্ছি।
সম্পূরক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতি বছরই জেলার বিভিন্ন জনপদের জন্য উন্নয়নমূলক নতুন স্কিম গ্রহণ করতে হয়। যা প্রতিটি জেলা জনপদের জন্য একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগসহ সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন টেকসই ব্যবস্থার আওতায় আসার ফলে জনপদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড গতিশীল হয়।
জেলার পল্লী সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম ভবিষ্যতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করবে এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বরিশাল জেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম।