• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলে আশরাফুলকে ২৬ টুকরো করে বন্ধু জরেজ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ১২:৪৬ অপরাহ্ণ
‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলে আশরাফুলকে ২৬ টুকরো করে বন্ধু জরেজ

ছবিতে আসমি শামীমা আক্তার কোহিনুর (বাঁয়ে), ডানের ছবিতে ব্রিফিং করছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন

সংবাদটি শেয়ার করুন....

রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে ‘হানি ট্র্যাপের’ ফাঁদে ফেলে হত্যা করে তার দেহ ২৬ খণ্ডে কেটে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের পাশে দুটি ড্রামে ফেলে রাখার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি পাওয়া গেছে। এই মামলার মূল আসামি জরেজুল ইসলামের প্রেমিকা শামীমা আক্তার কোহিনুরকে (৩৩) আলামতসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। র‌্যাব জানায়, ১৪ নভেম্বর সকালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা গ্রামে নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, ব্ল্যাকমেইল এবং লাশ গুমে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছিলেন।

শনিবার সকালে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন। তিনি জানান, ১১ নভেম্বর রাতে রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। তিনি একই এলাকার বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ব্যবসায়িক পাওনা নেওয়ার জন্য ঢাকায় আসেন। ১২ নভেম্বর সকাল থেকে তার ফোন বন্ধ থাকায় পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এলাকার পানির পাম্প সংলগ্ন দুটি নীল ড্রাম থেকে ২৬ খণ্ডে কাটা এক অজ্ঞাত ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়, সেটি ছিল নিখোঁজ আশরাফুল হকের। গ্রেফতার শামীমার মোবাইল বিশ্লেষণ ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ও জরেজ এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। জরেজ তাকে বলেন, তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব—যার মধ্যে ৭ লাখ নেবে জরেজ, আর ৩ লাখ পাবে শামীমা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার এক মাস আগেই শামীমা আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে তাকে আকৃষ্ট করেন। নিয়মিত অডিও-ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

ফায়েজুল আরেফীন বলেন, ১১ নভেম্বর রাতে ঢাকায় আসার পর জরেজ ও আশরাফুলের সঙ্গে ঢাকার শনিরআখড়ার নূরপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন শামীমা। সেখানে ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশ্যে আশরাফুলকে মালটার শরবতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তিনি অচেতন হওয়ার পর জরেজ বাইরে থেকে এসে শামীমা ও আশরাফুলের অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করেন। শামীমার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মুখে কসটেপ লাগায়। এরপর ইয়াবা সেবনের প্রভাবে জরেজ হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করে তাকে হত্যা করে।

লাশ পাশের ঘরেই রেখে দু’জন রাত কাটান। র‌্যাব-৩ জানায়, পরদিন সকালে জরেজ বাজার থেকে চাপাতি ও দুটি ড্রাম এনে মরদেহ ২৬ টুকরো করে ড্রামে ভরে। পরে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রামগুলো বাসা থেকে বের করে। মাঝপথে সিএনজি পরিবর্তন করে হাইকোর্টের মাজার গেটের কাছে পৌঁছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে ড্রাম দুটি গাছতলায় রেখে দ্রুত অটোযোগে সায়েদাবাদে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে জরেজ শামীমাকে কুমিল্লার বাড়িতে ফিরে যেতে বলে। এরপর তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শামীমার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিরআখড়ার নূরপুর এলাকা থেকে আশরাফুলের রক্তমাখা পাঞ্জাবি-পায়জামা, হত্যা করতে ব্যবহৃত দড়ি, কসটেপ, একটি গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট উদ্ধার করে র‌্যাব-৩। র‌্যাব জানায়, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা।

তবে হত্যার পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতার কোনো বিষয় আছে কি না—তা প্রধান আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদে পরিষ্কার হবে। গ্রেফতার শামীমা আক্তারকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা।