
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শেরে বাংলা ফজলুল হক হল ভূমিকম্পে হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। ভূকম্পনের পর হলের দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল ও বিভিন্ন অংশ ধসে পড়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত স্থানান্তর ও হল পুনর্নির্মাণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা হলের প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ’জীবন নিয়ে ছিনিমিনি চলবে না’, ‘ইঞ্জিনিয়ারের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘প্রশাসনের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। পরে শিক্ষার্থীরা সেখানে আধা ঘন্টা অবস্থান করে বিক্ষোভ সমাপ্ত করেন।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, ‘সকালের ভূমিকম্পে হলের এক পাশ দিয়ে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। কিছু দিন আগে যে অংশগুলো সংস্কার করা হয়েছিল সেগুলোও আবার ফেটে গেছে। তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এখন জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। হলটি অনেক আগেই অবাসযোগ্য হয়ে গেছে, কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর না করলে বড় দুর্ঘটনা ঘটবে।’
শেরে বাংলা হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ হাসান জেমস বলেন, ‘১৯৬২ সালে নির্মিত এই হল এখন পুরোপুরি জরাজীর্ণ। প্রতিটি রুমেই বড় বড় ফাটল দেখা যায়। রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ছাদ থেকে প্লাস্টার পড়ে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে— এমন ঘটনাও রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করে, কেউ কেউ তিন তলা থেকে লাফ দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছিল। আমরা বাঁচতে চাই, দ্রুত আমাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন।’
রাকসুর সহ সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন,‘জুম্মার নামাজের পর যদি নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা অপেক্ষা করবো না। প্রয়োজনে নিজেরাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অন্য হলে চলে যাব। বর্তমান হলে থাকা নিরাপদ নয়। আমরা যে ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছি সেটি কখন ধসে পড়বে বলা যায় না।’
শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ভূমিকম্পের পর পরিদর্শনে এসে আমরা অসংখ্য ফাটল দেখতে পেয়েছি। এই হলে শিক্ষার্থীরা আর নিরাপদ নয়। জুম্মার নামাজের পর বৈঠকে বসে তাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা চলছে, তাই তাদের বাড়ি পাঠানোও সম্ভব নয়। আমরা অবশ্যই দ্রুত নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘হলের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তিন তলা ঘুরে দেখেছি বিভিন্ন জায়গায় খসে পড়েছে, কিছু স্থানে গভীর ফাটল রয়েছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। বুয়েট বা রুয়েটের বিশেষজ্ঞ এনে ঝুঁকির মাত্রা যাচাই করতে হবে। যদি বিশেষজ্ঞ মত অনুযায়ী ঝুঁকি বেশি হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের দ্রুত রি-অ্যালোট করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’