বিগত কয়েক দশক ধরেই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও পরিবেশবিদদের মধ্যে চলছে নানা বিতর্ক ও ভবিষ্যদ্বাণী। কিন্তু সম্প্রতি নতুন কিছু গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ এই আলোচনা আরও জোরালো করে তুলেছে—পৃথিবী কি সত্যিই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? যদি যায়, তাহলে কবে এবং কত দ্রুত তা ঘটতে পারে?
জলবায়ু পরিবর্তন: নীরব ঘাতক
গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা এখন আর কল্পনা নয়—এটা এক কঠিন বাস্তবতা। জলবায়ুর উষ্ণতা দ্রুত বেড়ে চলেছে, যা তাপপ্রবাহ, মেরু অঞ্চলের বরফ গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের মতো বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।
IPCC (Intergovernmental Panel on Climate Change)-এর মতে, আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি বর্তমান হারে বাড়তে থাকে, তাহলে পৃথিবীর অনেক অঞ্চল বাসযোগ্য থাকবে না।
মহাজাগতিক হুমকি: উল্কাপিণ্ড ও গামা রে বিস্ফোরণ
নাসার বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, বিশালাকৃতির কোনো উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর কক্ষপথের দিকে ধেয়ে এলে, তা কয়েক সেকেন্ডেই মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। যদিও এর সম্ভাবনা খুবই কম, তবে এটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এছাড়াও মহাকাশে ঘটে যাওয়া Gamma Ray Burst বা সুপারনোভা বিস্ফোরণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে মুহূর্তে নষ্ট করতে পারে।
মানবসৃষ্ট বিপর্যয়: পারমাণবিক যুদ্ধ ও প্রযুক্তির অপব্যবহার
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানবজাতির ধ্বংস ডেকে আনতে পারে মানুষের হাতেই তৈরি পারমাণবিক অস্ত্র, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বা জৈব যুদ্ধাস্ত্রের অপব্যবহার। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনা মানবজাতিকে পরিণত করতে পারে আত্মবিধ্বংসী যুদ্ধে।
তাহলে, কবে ধ্বংস হবে পৃথিবী?
এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে নেই। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধ্বংস আসবে যদি আমরা এখনই পরিবেশ রক্ষা, প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার ও বৈশ্বিক শান্তির দিকে মনোযোগ না দিই।
অনেকে ধারণা করছেন, আগামী ২০০ থেকে ৫০০ বছরের মধ্যে যদি পৃথিবীর বর্তমান গতিপথ অব্যাহত থাকে, তবে মানবসভ্যতা সংকটের মুখোমুখি হবে। কিছু ভবিষ্যদ্বাণী আরও ভয়াবহ—২০৫০ সালের মধ্যেই বিশাল জনসংখ্যা, খাদ্য সংকট, পানির ঘাটতি এবং জলবায়ু বিপর্যয় মিলিয়ে পৃথিবী “আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত” অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে।
আশার আলো
এতসব আশঙ্কার মাঝেও বিজ্ঞানীরা আশা দেখাচ্ছেন—টেকসই উন্নয়ন, গ্রিন এনার্জি, আন্তর্জাতিক শান্তিচুক্তি ও সচেতনতার মাধ্যমে এই ধ্বংস ঠেকানো সম্ভব।
বিশ্বব্যাপী তরুণ প্রজন্ম পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসছে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, গ্লোবাল অ্যাকশন এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই হয়তো ধ্বংস নয়, বরং টিকে থাকার গল্প লিখতে পারবে এই পৃথিবী।