বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদের পদটি গত ১৫ মাস ধরে শূন্য পড়ে রয়েছে। যদিও ২০২৩ সালের নভেম্বরে এই পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয় এবং সেই আবেদনের সময়সীমা শেষ হয় ৭ ডিসেম্বর, তবুও দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
সম্প্রতি হঠাৎ করেই আবেদনকারী প্রার্থীদের আগামী ২৭ মে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছে। এই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের পেছনে প্রভাবশালী এক ডেপুটি গভর্নরের হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমানের স্ত্রী সায়েরা ইউনূস, যিনি বর্তমানে গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, তাকেই এই পদে বসাতে দৌড়ঝাঁপ চলছে।
জানা গেছে, সায়েরা ইউনূস আগামী ৩ জুলাই অবসরে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন তার চাকরির মেয়াদ থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্বিত রাখা হয়েছিল। এখন মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছানোয় দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন করে তাকে পদে বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, নিয়োগ বিলম্বের বিষয়ে তিনি অবগত নন এবং এটিকে ‘অন্য বিভাগের বিষয়’ বলে উল্লেখ করেন।
উল্লেখযোগ্য যে, ড. হাবিবুর রহমান নিজেও অতীতে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান অর্থনীতিবিদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। পরে ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ডেপুটি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং এরপর থেকে পদটি শূন্য পড়ে রয়েছে।
নির্বাচনী কমিটির এক বিচারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তার কাছে চারটি সিভি পাঠানো হয়েছে যার মধ্যে সায়েরা ইউনূসের সিভিও রয়েছে। তবে তিনি হাবিবুর রহমানের স্ত্রী—এই তথ্য তাকে জানানো হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নিয়োগেই পক্ষপাত বা ব্যক্তিগত সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। সব নিয়োগেই নির্ধারিত নীতিমালা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিকতা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারক পদে নিয়োগ নিয়ে এমন অস্বচ্ছতা ও পরিবারতান্ত্রিক প্রভাবের অভিযোগ উদ্বেগজনক। এটি শুধু প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক যদি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, তবে তা অর্থনীতি পরিচালনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একজন দক্ষ ও নিরপেক্ষ প্রধান অর্থনীতিবিদ নিয়োগ দেওয়া দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক নীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।