ইরানে সামরিক আগ্রাসনের পর নিজেদের পদক্ষেপ বৈধ প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা একের পর এক ইরানবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিই সামরিক হামলার কারণ। এমনকি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকেও হত্যার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিক।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী মেইর মাসরি–র এক বক্তব্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি ইঙ্গিত দেন, ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে পাকিস্তান।
এ মন্তব্য ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হওয়ার পথে, তখন পাকিস্তানের মতো পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রকে টেনে আনা গোটা অঞ্চলের কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের এই সম্ভাব্য অভিযোগ শুরু থেকেই প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ আত্মরক্ষামূলক, এটি আগ্রাসনের কোনো হাতিয়ার নয়।”
কূটনৈতিক তৎপরতা
এই ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই কূটনৈতিকভাবে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনির–এর যুক্তরাষ্ট্র সফরে। তিনি হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, “জেনারেল মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ ছিল আমার জন্য সম্মানের।”
বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য যে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সেই সংকট নিরসনে জেনারেল মুনিরের কূটনৈতিক ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি জানিয়েছেন, শান্তির প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে জেনারেল মুনির ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মেইর মাসরির এই মন্তব্য শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যকে নাড়িয়ে দিতে পারে। ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার ফাঁকে পাকিস্তানকে ‘টার্গেট’ করা একটি বিপজ্জনক বার্তা। বিশ্ব রাজনীতির দৃষ্টি এখন এই অঞ্চলের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।