• ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লাশ পোড়ানোর মামলায় ক্ষমা চেয়ে জবানবন্দি দিলেন রাজসাক্ষী আবজালুল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ১৭:৪৮ অপরাহ্ণ
লাশ পোড়ানোর মামলায় ক্ষমা চেয়ে জবানবন্দি দিলেন রাজসাক্ষী আবজালুল

ফাইল ছবি

সংবাদটি শেয়ার করুন....

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সাভারের আশুলিয়ায় গুলি করে হত্যার পর ছয়জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে ক্ষমা চেয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের এসআই শেখ আবজালুল হক। বুধবার মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এ দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি জানান, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আন্দোলন চলাকালে আশুলিয়া থানার ওসি এ. এফ. এম. সায়েদকে মোবাইলে আন্দোলন দমন ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী গ্রেফতারের নির্দেশ দিতেন এমপি সাইফুল, যা তিনি অধস্তনদের দিয়ে বাস্তবায়ন করতেন।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট সকালে থানায় পৌঁছে দায়িত্বে যোগ দেন এবং বেলা সাড়ে ১০টায় ওসি হ্যান্ড মাইক দিয়ে সব কর্মকর্তাকে ডেকে আন্দোলনে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে ওসি অন্য ইউনিটের ফোর্স নিয়ে বাইপাইল কেন্দ্রীয় মসজিদের দিকে যান, আর তিনি থানার ভেতর ও গেটে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দুপুর আড়াইটায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার খবর পেয়ে ওসি সায়েদ থানায় ফেরেন।

জবানবন্দিতে তিনি জানান, বিকেল ৪টার দিকে ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল থানার সামনে এলে ওসির নির্দেশে এএসআই বিশ্বজিৎসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য গুলি চালান, এতে কয়েকজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এরপর ওই লাশগুলো তিন চাকার ভ্যানে তুলে পিকআপে স্থানান্তর করা হয়। তিনি সন্দেহ করেন যে ওসি ও কয়েকজন কর্মকর্তার লাশগুলো নিয়ে ভিন্ন পরিকল্পনা ছিল। নার্ভাস হয়ে তিনি সিভিল পোশাক পরে থানার ভেতর থেকে বের হয়ে এক ফল বিক্রেতার ভাড়া বাসায় আশ্রয় নেন।

তিনি আরও জানান, ফজরের আজান পর্যন্ত সেখানে থাকার পর নিজ বাসায় ফেরেন এবং ১৫ আগস্ট থানায় গিয়ে নিজের নামে ইস্যু করা পিস্তল ও গুলি জমা দেন। পরে তিনি জানতে পারেন, পুলিশ সদস্যরা সেদিনই লাশগুলোতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন এবং বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্যান্টনমেন্টে চলে যান।

জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি নুরুল ইসলাম, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান রিপন, সাভার সার্কেল এডিশনাল এসপি আব্দুল্লাহিল কাফি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল কোনো ব্যবস্থা নেননি। বিবেকের তাড়নায় ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি রাজসাক্ষী হতে আবেদন করেছেন বলে জানান এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষ আংশিক জেরা করে; পরবর্তী জেরা বৃহস্পতিবার নির্ধারিত হয়েছে। আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মিজানুল ইসলাম, ফারুক আহাম্মদ, সহিদুল ইসলাম, মঈনুল করিম ও সাইমুম রেজা তালুকদার। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ছয়জনকে গুলি করে হত্যার পর পিকআপে তুলে লাশে আগুন দেওয়া হয়েছিল, এমনকি একজন জীবিত ব্যক্তিকেও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হয়। মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল-২।

এই মামলায় গ্রেফতারকৃত আবজালুল ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান ও কনস্টেবল মুকুল।