মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলা। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে, হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির ফলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, যা বৈশ্বিক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।
নাতাঞ্জে ইউরেনিয়াম গ্যাস লিকের শঙ্কা
আইএইএ মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “নাতাঞ্জ ও ইসফাহান স্থাপনার বাইরের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ভিতরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং সেন্ট্রিফিউজ ইউনিটে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড গ্যাস লিকের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।”
এই গ্যাস মানবদেহের ত্বক ও ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে বলে জানান গ্রোসি।
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনায় পারমাণবিক আলোচনায় ছন্দপতন
সম্প্রতি তেহরানে ইসরায়েলের টার্গেটেড ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা হতাহত হন। জবাবে ইরান তেল আবিবে পাল্টা হামলা চালালে পুরো অঞ্চলে অস্থিরতা চরমে পৌঁছায়। এমন প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক আলোচনা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি।
অতীতে হামলা হলেও এবার ঝুঁকি অনেক বেশি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে যেমন ১৯৮১ সালে ইরাকের ওসিরাক ও ২০০৭ সালে সিরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা হয়েছিল, তখন স্থাপনাগুলো নির্মাণাধীন ছিল এবং তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি ছিল না। কিন্তু এবারের হামলায় কার্যকর রিঅ্যাক্টর ও ইউরেনিয়াম প্রসেসিং ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।
‘একটি ভুলই যথেষ্ট’
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান ড্যান স্মিথ বলেছেন, “পারমাণবিক অস্ত্র ও স্থাপনা নিয়ে একটিমাত্র ভুল সিদ্ধান্তই মানবসভ্যতার জন্য চরম পরিণতি বয়ে আনতে পারে।” তিনি ১৯৮৩ সালে সোভিয়েত কর্মকর্তার ভুল ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্তকরণের উদাহরণ টেনে বলেন, “সেদিন বুদ্ধিমত্তার কারণে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়েছিল।”
আন্তর্জাতিক আহ্বান: পারমাণবিক স্থাপনাকে যুদ্ধক্ষেত্র না বানানোর অনুরোধ
আইএইএসহ বিভিন্ন মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংস্থা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক স্থাপনাগুলো যদি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়, তবে তা গোটা মানবজাতির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে।