ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজির (ESC) বার্ষিক সম্মেলনে এই গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, “ওজন নয়, শরীরের কোন অংশে চর্বি জমেছে, সেটিই হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ধারণে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
ওজন বেশি মানেই হার্ট অ্যাটাক—বহুদিন ধরেই এমনটাই ভেবে এসেছেন অনেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে ভিন্ন সত্য। সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বলছেন, কারও ওজন স্বাভাবিক হলেও যদি কোমরের মাপে অতিরিক্ত চর্বি জমে, তাহলে তার হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি অনেক বেশি।
🔬 ১৩ বছরের দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা
এই গবেষণাটি চালানো হয়েছে সুইডেনের মালমো প্রিভেন্টিভ প্রজেক্ট-এর অধীনে, যেখানে ৪৫-৭৩ বছর বয়সী ১,৭৯২ জন অংশগ্রহণকারীকে প্রায় ১৩ বছর ধরে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। উচ্চতা, ওজন, কোমরের মাপসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে গবেষকেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
⚠️ ওজন স্বাভাবিক, তবুও ঝুঁকিতে?
গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক অংশগ্রহণকারীর ওজন ছিল স্বাভাবিক, কিন্তু তাদের কোমরের মাপ ছিল উচ্চতার অর্ধেকের চেয়েও বেশি। এই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি ছিল অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
❓ বিএমআই কি তবে যথেষ্ট নয়?
বডি মেস ইনডেক্স (BMI) হলো ওজন ও উচ্চতার ভিত্তিতে স্থূলতা নির্ধারণের একটি প্রচলিত পদ্ধতি। তবে গবেষণার প্রধান উপস্থাপক ডা. জুজিচ মনে করেন, এটি যথেষ্ট নয়।
“বিএমআই লিঙ্গ, বয়স বা জাতিগত বৈচিত্র্য বিবেচনা করে না। এটি বলে না শরীরের কোন অংশে চর্বি জমছে, যা হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,”—ডা. জুজিচ।
🩺 বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
গবেষক ডা. জন মলভিন বলেন,
“যদি আপনার কোমরের পরিমাপ আপনার উচ্চতার ৫০% ছাড়িয়ে যায়, তাহলে এটি একটি বড় সতর্ক সংকেত।”
তিনি পরামর্শ দেন, রক্তচাপ পরীক্ষার মতোই নিয়মিতভাবে কোমরের মাপও পরিমাপ করা উচিত।
✅ কী করা উচিত এখন?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোমরের মাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে:
-
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা শরীরচর্চা করা
-
চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া
-
সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
-
প্রতি ৬ মাসে কোমরের মাপ পরিমাপ করে নজর রাখা
🧠 শেষ কথা: চেহারায় মোটা না দেখালেও বিপদ লুকিয়ে থাকতে পারে
নতুন এই গবেষণা দেখিয়েছে, হৃদরোগের ঝুঁকি চেহারায় বা ওজনে বোঝা যায় না। কোমরের চর্বি নীরব ঘাতকের মতো কাজ করতে পারে। তাই শুধু ওজন নয়, এখন থেকে ফিতেও হতে পারে হৃদযন্ত্রের সতর্ক ঘণ্টা।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস