তৈরি পোশাক শিল্পে বিদ্যমান সংকট উত্তরণে ঋণের কিস্তি পরিশোধে সময়সীমা ৬ মাস করার দাবি জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
বুধবার (২ জুলাই) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আগারগাঁও কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠককালে এই দাবি তুলে ধরেন তিনি। এসময় বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল।
ঋণ শ্রেণিকরণে পরিবর্তনের প্রভাব
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ৯ মাস থেকে কমিয়ে ৩ মাস করেছে, যা অনেক উদ্যোক্তার জন্য বাস্তবায়ন কঠিন। তাই সময়সীমা ৬ মাসে উন্নীত করার প্রস্তাব করেন তিনি। এতে প্রায় ৫০০-৬০০ পোশাক কারখানা ‘ক্লাসিফায়েড’ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে বলে জানান।
নগদ সহায়তা ও করনীতির বিষয়ে উদ্বেগ
বিজিএমইএ জানায়, বিশেষ নগদ সহায়তা ১% থেকে কমিয়ে ০.৩০% এবং বিকল্প নগদ সহায়তা ৪% থেকে কমিয়ে ১.৫% করায় রপ্তানিমুখী খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়া পোশাক রপ্তানিতে ১% হারে উৎসে করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করেন নেতারা।
পুনঃঅর্থায়ন ও সংকটকালীন তহবিল গঠনের প্রস্তাব
বৈঠকে প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট পুনঃঅর্থায়ন স্কিমটি পুনরায় চালু করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কার্যকর রাখার দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে রপ্তানির বিপরীতে একটি ফোর্সড ফান্ড গঠনের আহ্বান জানানো হয়, যার মাধ্যমে সংকটকালে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
কাস্টমস ও চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি
বিজিএমইএ কাস্টমস প্রক্রিয়াকে সহজতর ও হয়রানিমুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে জানায়, লিড টাইম কমাতে হলে কাস্টমস কার্যক্রমে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো জরুরি। এনবিআর ও কাস্টমস সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রস্তুতের উদ্যোগও নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাস সরবরাহ সংকট সমাধানে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদও দেওয়া হয়।
শিল্পাঞ্চল ও শ্রমিক সেবায় ভূমিকা রাখতে চায় উদ্যোক্তারা
গাজীপুর ও আশুলিয়ায় সরকার জমি বরাদ্দ দিলে সেখানে শ্রমিকদের জন্য আবাসন, হাসপাতাল ও স্কুল নির্মাণে উদ্যোক্তারা আগ্রহী বলে জানান বিজিএমইএ নেতারা।
পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জে বন্ধ হয়ে যাওয়া গার্মেন্টস পল্লী প্রকল্প পুনরায় চালু এবং চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলোর জন্য শিল্পাঞ্চল গঠনে জমি বরাদ্দের আহ্বান জানানো হয়।
সরকারের আশ্বাস
বৈঠকে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “সরকার পোশাক খাতের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং এ খাতের টেকসই উন্নয়নে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”