বরগুনা থেকে ফিরে এস এম রফিকুল ইসলাম

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরগুনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেদী হাসান খান বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণসহ কাজের গুণগতমান রক্ষা করে জনস্বার্থে উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন,বরগুনা জেলায় পেশাদারিত্বশীল ঠিকাদারদের সংকট,যে কারণে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে আমাদের হিমশিমের সম্মুখীন হতে হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান,বরগুনা একটি ছোট জেলা হলেও এ জেলায় কোন পেশাদারিত্ব শীল ঠিকাদার তৈরি হয়নি। কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৈরি হলেও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক হওয়ার কারণে বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হয় ,সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় এ জেলার বাহিরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ পেয়ে থাকে।আমরা যখন কোন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী ফার্মের জন্য সুপারিশ করি তখন দেখা যায় তাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট ,ফিনান্সিয়াল স্বচ্ছলতা ও আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয়তা যথাযথ ভাবে সঠিক থাকে। কিন্তু কাজ পাওয়ার পর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ফিল্ড পর্যায়ে দেখা যায় অনুমোদনের পূর্বের এবং বাস্তবতার সাথে অভিজ্ঞতা ও কর্মযজ্ঞের কোন সঠিকতা নেই। এ কারণে উন্নয়ন কাজগুলো বাস্তবায়নে আমাদের প্রচুর পরিশ্রম এবং বেগ পেতে হয়। তিনি আরো বলেন, দুটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে গত জুন মাসের ২৩ তারিখ বরগুনা জেলায় যোগদান করি, প্রথমত জুন মাসের

তৎকালীন বরগুনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ুন কোবির মৃত্যুবরণ করেন। জুন মাস সচার আচার ক্লোজিং এর মাস। এছাড়াও দ্বিতীয় বিষয়টি হলো ,এ জেলায় একটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ভেঙে বেশ কিছু লোক নিহত হন ।সম্ভবত কারণেই এলজিইডির বরগুনা জেলার বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তাৎক্ষণিক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে কর্তৃপক্ষ আমাকে এ জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেন। বরগুনা জেলায় যোগদানের পর থেকেই আমি এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করি। প্রথমত জুন মাসের ক্লোজিং, এ বিষয়গুলো আমি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করি। দ্বিতীয়তঃ ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ভেঙে কয়েকজন লোকজনের নিহত হওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয় সেই কমিটির সদস্য আমি ছিলাম।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বৈঠক ও আলোচনার মাধ্যমে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম চলতে থাকে। মূলত ব্রিজটি ছিল এলজিইডির একটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ।যাহা অনেক আগেই চলাচলের জন্য অনুপযোগী ছিল। কিন্তু কোন বিকল্প না থাকায় স্থানীয় জনসাধারণ এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতো ।সে কারণেই হঠাৎ ওভারলোড হওয়ার কারণে ব্রিজটি ভেঙে হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরবর্তী পর্যায়ে তদন্ত কমিটি ব্রিজের কাজের গুণগত মানের সঠিকতা নির্ণয়ের জন্য বুয়েটের মাধ্যমে যাচাই বাছাইয়ের সুপারিশ করে মন্ত্রণালয় প্রেরণ করেন। আমরা একটি নিদের্শনা পেয়েছি যে,বরগুনা জেলায় যতগুলো ঝুকিপূর্ণ ব্রিজ আছে, সে গুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া। আমরা ইতোমধ্যে সমস্ত জেলায় এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছি। কাজের গুণগত মান ও টেকসই নিশ্চিতকরণ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা কাজের গুণগত মান ও টেকসই নিশ্চিতকরণের জন্য প্রতিনিয়ত মনিটরিং এবং সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক দায়িত্বশীল প্রকৌশলীদের যথাযথ তদারকির মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়নের পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে থাকি।পাঁচই আগস্ট এর পূর্বের এবং পরের পরিবেশগত পার্থক্য সম্পর্কে বলেন, ৫ই আগস্ট এর পূর্বে আমরা সচরাচর আতঙ্কিত থাকতাম ।দেখা গেল, ছাত্রলীগের নামধারী কেউ এস দলীয় ঊর্ধ্বতন কারো রেফারেন্স দিয়ে কথা বলতেন, তখন আমরা বিব্রত হতাম। কিন্তু ৫ আগস্ট এর পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের মধ্যে সেই আতঙ্ক নেই। আমরা এখন রাষ্ট্র এবং জনস্বার্থে প্রশাসনিক বিধি-বিধান অনুসরণ করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রধান প্রকৌশলী মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছি এবং তাদের পরামর্শ ও নির্দেশনা মোতাবেক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বিগত পনেরো বছর দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকা কারণে যারা কাজ করেছেন ,তাদের ঠিকাদারি লাইসেন্সের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি হয়েছেন।কিন্তু এই ১৫ বছর যারা কোন কাজ করতে পারেনি তারা অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ,সে ক্ষেত্রে বঞ্চিতদের করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন,বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যারা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের অবশ্যই কাজ পাওয়া এবং করার অধিকার আছে। বিষয়টি অবশ্যই রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বিবেচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন বলে আমি আশাবাদী।